শিরোনাম
দেশে বাঁশের তৈরি প্রথম মোবাইল টাওয়ার
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১১:২৭
দেশে বাঁশের  তৈরি প্রথম  মোবাইল টাওয়ার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

টেলিযোগাযোগ টাওয়ার তৈরির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাঁশের কাঠামোয় টাওয়ার স্থাপন করেছে বিশ্বের অন্যতম টেলিযোগাযোগ অবকাঠমো সেবাদানকারী কোম্পানি ইডটকো।


রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ির ছাদে এই উদ্ভাবনীমূলক টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।


প্রথাগত টাওয়ারের বাইরে এই উদ্ভাবনীমূলক পরিবেশবান্ধব টাওয়ার তৈরি করেছে যৌথভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ও ইডটকো।


ইডটকোর ধারাবাহিক গবেষণার আরেকটি নতুন সংযোজন বনজসম্পদ বাঁশ দিয়ে তৈরি নবায়ণযোগ্য এই অবকাঠামো।


মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক অনুষ্ঠানে বাঁশের এই টাওয়ারের উদ্বোধন করে কোম্পানিটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।


ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ সেবাগুলো আলাদা করার লক্ষ্যে ভিন্ন টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।’


মোবাইল ফোন অপারেটররা বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই তারা (অপারেটররা) টাওয়ারের মতো সেবাগুলো আর প্রদান করতে পারবে না।’


চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বাঁশের তৈরি টাওয়ার যদি সফলতা লাভ করে তবে দেশীয় প্রযুক্তি হিসেবে এ খাতে প্রণোদনা দেয়া হবে।’



বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর নকশা এবং নির্মাণে গতানুগতিক স্টিলের অবকাঠামোর বিকল্প উপাদান হিসাবে বাঁশের সক্ষমতার উপর গবেষণা কাজটি পরিচালনা করেন।


ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘দেশে প্রথম বাঁশের তৈরি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপিত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে বাঁশ একটি সহজলভ্য উপাদান। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অবদান রাখতে এ ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এ দেশের পরিবেশের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাঁশের ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, বাঁশের বৈচিত্রময় গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে টেলিকম টাওয়ার তৈরির জন্য এটি একটি ভালো উপাদান হতে পারে। পরিবেশ সংক্ণরক্ষণের মাধ্যমে ও পরিবেশসচেতন জাতি গঠনে এটি অবদান রাখতে সক্ষম।’


ইডটকো জানায়, গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাঁচা বাঁশকে নমনীয় এবং প্রসারণীয় শক্তি দিয়ে কংক্রিটের ওজন বহন করার উপযোগী করলে এটি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো তৈরিতে সক্ষম উপাদানে পরিণত হয়। এটি প্রতি ঘন্টায় ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতিতে টিকে থাকতে পারে এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে এর আয়ূষ্কাল প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।


ইডটকো আরও জানায়, বাঁশের তৈরি একটি টাওয়ার নির্মাণ করতে সময় লাগে ১২ দিন। গতানুগতিক স্টিলের টাওয়ারের চেয়ে এটি তৈরিতে কম জ্বালানী ব্যয় হয়। এ টাওয়ারে একই সাথে সর্বোচ্চ আটটি এন্টেনা স্থাপন করা সম্ভব, যার প্রতিটিই একই সাথে কার্যকর থাকবে।


অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাঁশের ওজন প্রাকৃতিকভাবে হালকা হওয়ার কারণে এটি সহজেই বহন করা যায় এবং ভবনের উপর অতিরিক্ত কোন চাপ সৃষ্টি না করেই স্থাপন করা যায়। উই বা ঘুনপোকা এবং ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁশকে রক্ষা করতে এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকিয়ে রাখতে এটিকে রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।


ইডটকো গ্রুপের সিইও সুরেশ সিধু বলেন, ‘ইডটকো বরাবরই টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান এবং উদ্ভাবনীমূলক সল্যুশন্স নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা বা গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। বাঁশের তৈরি এ টেলিযোগাযোগ টাওয়ার আমাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন। টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশকে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করে পরিবেশের উপর এর প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যেই মূলত আমরা এ উদ্যোগটি নেই। বিশেষ এই টাওয়ারটি নির্মানে অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশের শীর্ষ প্রকৌশল বিদ্যাপীঠ বুয়েটকে পাশে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি ভবিষ্যতেও তাদের এ ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের রাজধানীর অধিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের অগ্রগণ্য ভূমিকার আরেকটি নিদর্শন হবে এই টাওয়ার।’


চলতি বছরে ইডটকো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন (প্রুফ অব কন্সেপ্ট- পিওসি) হিসাবে আরো কিছু বাঁশের টাওয়ার স্থাপন করবে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি যেসব দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশের সহজলভ্যতা রয়েছে সেসব দেশে এই সল্যুশন নিয়ে যাবে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com