পেঁয়াজের দামে হঠাৎ বড় পতন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৩
পেঁয়াজের দামে হঠাৎ বড় পতন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সরবরাহ ঘাটতির অভিযোগে ঊর্ধ্বমুখী থাকা পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কমতে শুরু করেছে। রাজধানীতে গত দুদিন আগে যে পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়।


১৮ মার্চ, সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঊর্ধ্বমুখী থাকা পেঁয়াজের ঝাঁজ কমতে শুরু করেছে।


ভ্যান থেকে পেঁয়াজ কিনছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করা আল-আমিন। তিনি জানান, দুইদিন আগেও যে পেঁয়াজ কিনলাম ১০০ টাকা করে। আজকে এসে দেখি তা অর্ধেকে নেমে গেছে।


এদিকে, দেশের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে খ্যাত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে। তাতে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণের পেঁয়াজ গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।


স্থানীয় কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে এসেছে। আবার কৃষকেরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন। তাতে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এই দরপতন ঘটেছে।


জানা যায়, সুজানগর উপজেলা সদরে প্রতি রবিবার ও বুধবার পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। গত বুধবার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এর পর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। রোববার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম কমে যাওয়ায় বহু কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি না করে বাড়িতে ফিরে গেছেন।


সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা হাটেও মিলেছে পেঁয়াজের দরপতনের একই চিত্র। রবিবার এ হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশ হয়ে বিক্রির জন্য আনা পেঁয়াজ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।


হঠাৎ দাম কমার বিষয়ে সুজানগর হাটের পাইকার আবদুল আজিজ বিশ্বাস বলেন, রমজানের শুরুতে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। তাতে বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। রমজান শুরুর পর থেকেই মজুত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে কৃষকেরাও বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন। তাতে দরপতন ঘটে।


এ বাজারের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, মাঠে থাকা পেঁয়াজ পরিপূর্ণ হতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। তার আগেই কৃষকেরা তড়িঘড়ি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পেঁয়াজ বাজারে তুলছেন।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাবনায় দুই জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়। একটি মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ, অপরটি হালি পেঁয়াজ। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। এ পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।


এদিকে পেঁয়াজের দরপতনে দুই উপজেলার কৃষকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। দাম আরও কমে গেলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত তাঁদের ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ মণ। তাতে বর্তমান দামে বিক্রি করা গেলে তারা কিছু লাভের দেখা পাবেন। তবে দাম আরও কমে গেলে লোকসান গুনতে হবে।


খয়রান গ্রামের কৃষক মুরাদ উদ্দিন বলেন, গত বছর এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম ছিল। প্রতি মণ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। কিন্তু এ বছর দাম সেই তুলনায় কম।


জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। তবে বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষকের লোকসান হবে না।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com