শিরোনাম
মীরসরাইয়ে আমনের আবাদ বেড়েছে
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:৫৪
মীরসরাইয়ে আমনের আবাদ বেড়েছে
মীরসরাই প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সবজি উৎপাদন ও চলতি আমন আবাদে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে শস্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও কৃষি জমি বিপন্নতা রোধ না হওয়ায় পূর্বের তুলনায় ঝুঁকি এখনো কমেনি চট্টগ্রামের সবজি ও কৃষি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ জনপদ মীরসরাই উপজেলায়। শুধু মীরসরাই নয়, চট্টগ্রামের সর্বত্রই এই আশংকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।   

 

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় একসময় পতিত জমির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। জমির মালিক বিদেশে থাকায় পতিত থাকত এসব জমি। তবে বিগত কয়েক বছরে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। একদিকে পতিত জমির পরিমাণ কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে কৃষিজমির বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার। ধানের পাশাপাশি সবজি জাতীয় চাষের পরিধি বাড়ায় শস্য নিবিড়তা বাড়ছে চট্টগ্রামে।

 

সাধারণত এক বছরে নির্দিষ্ট কোনো জমিতে যে ক’টি ফসলের আবাদ করা হয়, তার শতকরা হার হচ্ছে ওই জমিতে ফসলের নিবিড়তা বা শস্য নিবিড়তা। যেমন, কোনো জমিতে বছরে তিনটি ফসল চাষ হলে ওই জমির শস্য নিবিড়তা হবে ৩০০ শতাংশ। আর দুই ফসল ফললে ২০০ শতাংশ। যদি নির্দিষ্ট ওই জমিটি বছরে শুধু একটি মাত্র ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তবে ওই জমির শস্য নিবিড়তা হবে ১০০ শতাংশ।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ মৌসুমে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় ফসলের নিবিড়তা ছিল ১৯১ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ছিল ১৮৫ শতাংশ, কক্সবাজারে ১৯২, নোয়াখালীতে ১৮৪, ফেনীতে ২০২ দশমিক ৯ ও লক্ষ্মীপুরে ২০৫ শতাংশ। তবে সাত বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বেড়ে এখন ২০০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।  

 

এ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলায় শস্যের নিবিড়তা খুব বেশি না বাড়লেও কক্সবাজার, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০০৯ মৌসুমে কক্সবাজারে শস্য নিবিড়তা ছিল ১৯২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৭ শতাংশ। একইভাবে নোয়াখালীতে ১৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯২ এবং লক্ষ্মীপুরে ২০৫ থেকে বেড়ে ২৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাষযোগ্য ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭১৩ হেক্টরের মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ছয় লাখ ৬৪ হাজার ২০৭ হেক্টর। আবাদযোগ্য পতিত জমির পরিমাণ ২৮ হাজার ৫০৬ হেক্টর। আবাদি জমির মধ্যে এক ফসলি জমি এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৬ হেক্টর, দুই ফসলি জমি তিন লাখ ৫৬ হাজার ৩৪০, তিন ফসলি এক লাখ ৪৬ হাজার ৬০৭ এবং তিনের অধিক ফসলি জমি চার হাজার ৪০৪ হেক্টর। সাত বছর আগে এ অঞ্চলে এক ফসলি জমি ছিল ২৯ হাজার ৫৫৮ হেক্টর। এখন তা কমে ২২ হাজার ৬৯৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এক ফসলি জমির তিন ফসলিতে রূপান্তর। এক ফসলি জমির তিন ফসলিতে রূপান্তরের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শস্য নিবিড়তা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. বছির উদ্দিন বলেন, দেশের কৃষি অঞ্চলগুলোয় শস্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে সরকার ২০১০ সাল থেকে বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রণোদনার পাশাপাশি বীজ ও সার দেয়ার মাধ্যমে কৃষকদের আরো বেশি আগ্রহী করতে মাঠকর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছে। এছাড়া সবজির আবাদ বেড়ে যাওয়ায় পতিত ও এক ফসলি জমি দ্রুত দুই কিংবা তিন ফসলিতে রূপান্তর হচ্ছে। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা রোধ করে প্রণোদনা কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া গেলে এ অঞ্চলের শস্য নিবিড়তা আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

মীরসরাই উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম জানান, চলতি বছর উপজেলার ২০ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার হেক্টর বেশি। আবার এর পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় কম বলেও তিনি জানান। চলতি বছরে প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশের জন্য বেড়েছে।

 

কিন্তু পূর্বের তুলনায় কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষি জমিতে এখনো কলকারখানা স্থাপন বন্ধ হয়নি। অর্থনৈতিক জোন ছাড়া এখনো কৃষি জমি খুন করা হচ্ছে। এটি রোধ না করলে কৃষি উৎপাদনে এগিয়ে যাওয়া থেকে আমাদের পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা অমূলক নয়।

 

বিবার্তা/জিয়া/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com