শিরোনাম
সোনালী ব্যাংকের হালচাল
১৩ গ্রাহকের কাছে ঋণের ৭৫ শতাংশ
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ২২:৪৪
১৩ গ্রাহকের কাছে ঋণের ৭৫ শতাংশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৭৫ শতাংশের বেশি রয়েছে ১৩ গ্রাহকের কাছে। ২০১৫ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ১৩ গ্রাহকের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়েছে।


নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আখতার ও আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী। গত ২৮ এপ্রিল স্বাক্ষরিত ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকটির শীর্ষ ১৩ গ্রাহকের মধ্যে পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- বেক্সিমকো গ্রুপ, হল-মার্ক গ্রুপ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স, থার্মেক্স গ্রুপ ও আরএসআরএম গ্রুপ। রাষ্ট্রায়ত্ত আট প্রতিষ্ঠান হলো- বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন (রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর এবং নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড।


নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৪৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে দুই হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। খেলাপিতে শীর্ষে রয়েছে আলোচিত হল-মার্ক গ্রুপ।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, হল-মার্ক গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে এক হাজার ৬৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। হল-মার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হল-মার্ক ফ্যাশন লিমিটেডের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ৭৭৫ কোটি ৩৪ লাখ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ, হল-মার্ক ডিজাইন ওয়্যার লিমিটেডের কাছে ৭২ কোটি ৩৭ লাখ, ওয়াল মার্ট ফ্যাশন লিমিটেডের কাছে ১৭০ কোটি ৩ লাখ ও হল-মার্ক স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ৭২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।


সোনালী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের কাছে। এ গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা খেলাপি হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়েছে।


বেক্সিমকো গ্রুপের অধীন বেক্সিমকো লিমিটেডের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ফান্ডেড ঋণ এক হাজার ৪০৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেডের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৭৬ কোটি টাকা।


টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ৬৯০ কোটি টাকা, যা সোনালী ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণের ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। টি অ্যান্ড ব্রাদার্স নিট কম্পোজিট লিমিটেড, ড্রেস মি ফ্যাশন লিমিটেড ও এক্সপার টেক লিমিটিডের নামে এ ঋণ নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৪৭০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।


বস্ত্রখাতের প্রতিষ্ঠান থার্মেক্স গ্রুপের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৭৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থার্মেক্স চেক ফ্যাব্রিকস লিমিটেড, থার্মেক্স মেলাঞ্জ, স্পিনিং মিলস, থার্মেক্স নিট ইয়ার্ন, থার্মেক্স ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন, থার্মেক্স টেক্সটাইল মিলস, ইন্ডিগো স্পিনিং ও থার্মেক্স স্পিনিং লিমিটেডের (ইউনিট-২) নামে এ ঋণ নেয়া হয়েছে। ঋণের এ অঙ্ক ব্যাংকটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ২ দশমিক ২ শতাংশ।


ইস্পাত খাতে আরএসআরএম গ্রুপের মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেড ও রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৪৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৩৭২ কোটি ১৪ লাখ টাকা।


সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিদার মো. আব্দুর রব বলেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এখন আর বড় ঋণে যাচ্ছি না। বেসরকারি খাতের খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক দেশীয় আইনের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।


এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত আট প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণ ১৯ হাজার ৯২৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদফতরের কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৬৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ঋণ ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।


দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৩২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।


তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের (রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র) সোনালী ব্যাংকের ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ তিন হাজার এক কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।


এছাড়া বিসিআইসির কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৩৭৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ ঋণ ব্যাংকটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৭১ কোটি এক লাখ টাকা।


নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কাছে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বিএডিসির কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।


আর বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে সোনালী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৭০৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ ঋণ ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ১ শতাংশ।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, সরকারি ব্যাংক হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঋণ যাবে, সেটি স্বাভাবিক বিষয়। শুধু বড় গ্রাহকদের কাছে ঋণ প্রদান ও খেলাপি হয়ে যাওয়া সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের মূল সমস্যা। ঋণঝুঁকি, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন এ তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ের জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। তার আলোকেই ব্যাংকগুলোয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপার ভিশনের পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।


বিবার্তা/জিয়া/রয়েল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com