শিরোনাম
ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়, ঝুঁকিতে ব্যাংকাররা
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ২২:৪৪
ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়, ঝুঁকিতে ব্যাংকাররা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। ওই মহামারি বাংলাদেশেও আঘাত এনেছে। তাই সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে জরুরি কাজের জন্য সীমিত আকারে খোলা রাখা হয়েছে ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। অপ্রয়োজনেই অনেক গ্রাহক ব্যাংক যাতায়াত করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যাংকারা রয়েছেন করোনা ঝুঁকিতে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য ব্যাংকগুলোতে লেনদেন হচ্ছে তিন ঘণ্টা। এই সময়ের বেশিরভাগ গ্রাহকই টাকা তুলতে আসছেন। মাসের শুরুর দিক হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করোনাভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সীমিত শাখা খোলা রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।


শুধু তাই নয়, মাসের প্রথম দিক হওয়ায় বেতন, অবসর, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা তোলার চাপ অনেক বেড়ে গেছে। রবিবার (৫ এপ্রিল) ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকার তুলনায় জেলা ও উপজেলা শাখাগুলোতে গ্রাহকদের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, তারা ঠাসাঠাসি করে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। গ্রাহকদের নিয়ন্ত্রণে শাখা ব্যবস্থাপকদের পুলিশ পর্যন্ত ডাকতে হয়েছে। এতে করে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


রবিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব ব্যাংকের সব শাখায় গ্রাহকদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে সোনালী, রূপালী, জনতা ও ইসলামী ব্যাংকে ভিড় সবচেয়ে বেশি ছিল।


রাজধানীর হাতিরপুল অগ্রণী ব্যাংকের অফিসার তাজিন সামছু এশা। তিনি বিবার্তাকে বলেন, হাতিরপুল এলাকায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা লেনদেন করেন না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে না গেলেও অপ্রয়োজনীয় লোকজনের পদাচারণ অনেক বেশি। ওইসব লোকজন ব্যাংকে দিয়ে ভিড় করেন। কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন না। এমনকি গ্রাহকরা মাস্ক পরিদান করেন না। এতে ব্যাংকের কর্মরত সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।


রবিবার রাতে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সাধারণ সম্পাদক (সোনালী ব্যাংক) মোজ্জাম্মেল লেলিন বিবার্তাকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণে গ্রাহক আসছে এতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কোনো সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, প্রয়োজন ছাড়াও অনেক গ্রাহক ব্যাংকে আসছেন। তারা এসে অযথা ভিড় করছেন। বর্তমানে এই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।


সোনালী ব্যাংকের যশোরের কেশবপুর শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ব্যাংকে প্রতিদিনের চেয়ে আজ বেশি গ্রাহক এসেছেন। গ্রাহকের এতটাই চাপ ছিল যে লাইনে এক ইঞ্চি ফাঁকাও ছিল না। ব্যাংকের ভেতর ছিল লোকে লোকারণ্য। এমনকি গেটের বাইরেও ছিল শত শত গ্রাহক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেশবপুর থানা পুলিশের সহায়তা নিতে হয়েছে।


সোনালী ব্যাংকের নওগাঁ পত্নীতলা শাখা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর শাখা, টাঙ্গাইল শাখা এবং চট্টগ্রামের মিরেরসরাই শাখাতে গ্রাহক ভেতরে কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। এমনকি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেকটা কষ্ট হয়েছে। কারণ স্বল্প সময় লেনদেন হওয়ায় গ্রাহকরা কে আগে টাকা উঠাবে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যেও অনেকেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।


ইসলামী ব্যাংকের এক গ্রাহক বলেন, আমি সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংক যাই টাকা তুলতে। কিন্তু এতো ভিড় যে, টাকা না তুলে চলে এসেছি। আগামীকাল আবারো যাবো।


এদিকে, একাধিক ব্যাংকারের সাথে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, জ্যামিতিক হারে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে ব্যাংকের সবগুলো শাখা কেন খোলা। ব্যাংকারদের নিরাপত্তার পাশাপাশি যারা ব্যাংকে আসছেন, সবাই ঝুঁকিতে রয়েছেন। নির্দেশ মেনে নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে?


তারা এই পরিস্থিতিতে বিকল্প কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু শাখা খোলা রাখা, যে শাখাগুলো খোলা থাকবে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া, যেন বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। সুনির্দিষ্ট শাখাগুলোতে যারা ডিউটি করবেন তাদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা এবং শাখার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করা।


এদিকে সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকাররা বিভিন্ন শাখার গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়ের ছবি দিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন। তারা কেউ লিখেছেন- ‘এই রসিকতার শেষ কোথায়? কেউ লিখেছেন, প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এর মাঝে আমাদের উদাসীনতা, নিয়ম না মানার সংস্কৃতি তো আছেই। আবার রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের কাছে হার মেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে অনেক শ্রেণির পেশার মানুষের। এসবের মাঝেও বড় ঝুঁকি আবার ব্যাংক খোলা রেখে করোনা প্রতিরোধ! রীতিমতো রসিকতার শামিল। গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড়, সামাল দেয়ায় দুষ্কর।’


উল্লেখ্য, করোনা সংকটকালে দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন দেশের সাড়ে ৬ লাখ ব্যাংকার। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসকদের মতো তারাও রয়েছেন সম্মুখসারিতে। কেননা দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়েও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংকিং সেবা অত্যাবশ্যকীয়। তাই সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা চালু এখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০ পর্যন্ত ব্যাংকিং আওয়ার ঘোষণা করেছে।


বিবার্তা/খলিল/জাহিদ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com