শিরোনাম
সরকারি ৮ ব্যাংকের ৭টিতেই মূলধন ঘাটতি
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৫৪
সরকারি ৮ ব্যাংকের ৭টিতেই মূলধন ঘাটতি
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরেও মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি মালিকানার নয় ব্যাংক। আর এ নয় ব্যাংকের মধ্যে সাত ব্যাংকই রাষ্ট্রীয় মালিকানার। এসব ব্যাংক বাঁচাতে বছরের পর বছর জনগণের করের টাকায় মূলধন জোগান দিচ্ছে সরকার। এরপরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি ব্যাংকগুলো ঘাটতি থেকে বের হতে পারছে না। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ধারাবাহিকভাবে ঘাটতি বেড়ে গত সেপ্টেম্বর শেষে সাত ব্যাংকই ঘাটতিতে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪,৬৭০ কোটি টাকা।


আর সার্বিকভাবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নয় ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ১৬,৪০২ কোটি টাকায়।


আর এই ঘাটতির তালিকার শীর্ষে রয়েছে রাষ্ট্রীয় সোনালী, বেসিক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ তালিকায় থাকা অন্য পাঁচ সরকারি ব্যাংক হলো জনতা, অগ্রণী ও রূপালী, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের নামও রয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে সরকারি খাতের সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৪,৯২২ কোটি টাকা। আর মার্চে মূলধন ঘাটতি ছিল ৫ ব্যাংকে। এই ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ছিল ১৩,৩৪৪ কোটি টাকা।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ৬,৯৮১ কোটি টাকা, জুনে যা ছিল ৭,৪১৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২,৪২৩ কোটি টাকার ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের, জুনে যা ছিল ২,২৮৬ কোটি টাকা।


এরপরে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ২,২৭৮ কোটি টাকা, জুনে এর পরিমাণ ছিল ২,৬০৬ কোটি টাকা।


এছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ১,৩৬৮ কোটি টাকা, জুনে যা ছিল ১,০৫৩ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি ৭৭১ কোটি টাকা, জুন শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল ৬৬৪ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২০০ কোটি টাকা থেকে কমে ১১২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।


বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭২৬ কোটি টাকা, জুনে এর পরিমাণ ছিল ৬৯৯ কোটি টাকা।


সরকারি মালিকানাধীন ৮ ব্যাংকের মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ।


অন্যদিকে বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৩০৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে, জুন শেষে যা ছিল ২৯৮ কোটি টাকা। আর আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ১,৪৪৪ কোটি টাকা, জুনে ঘাটতি ছিল ১,৪৩৬ কোটি টাকা ।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে মূলধন ঘাটতি বাড়বেই। রাষ্ট্রীয় মালিকানার অনেক ব্যাংক বিনিয়োগের গুণগত মান যাচাই-বাছাই না করেই নানান প্রেক্ষাপটের কারণে ঋণ বিতরণ করেছে। যা পরবর্তীতে ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে ব্যাংকের সংরক্ষিত মূলধন ঘাটতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।


ব্যাংকগুলোর আর্থিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার অন্যতম পরিমাপক হচ্ছে মূলধন পর্যাপ্ততা। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতিমালা ব্যাসেল-৩-এর আলোকে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখতে হচ্ছে। এর আগে ব্যাসেল-টু নীতিমালার আলোকে ন্যূনতম ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ, এর মধ্যে যেটি বেশি সে হারে মূলধন রাখতে হতো। এখনও একই হারে মূলধন রাখতে হচ্ছে। তবে পরিবর্তনটা এসেছে উদ্যোক্তা মূলধন রাখার বেলায়। এখন ১০ শতাংশের মধ্যে উদ্যোক্তা মূলধন রাখতে হচ্ছে ন্যূনতম সাড়ে ৪ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যাংকিং পরিভাষায় টিআর-১ ও টিআর-২ নামে পরিচিত ঘরে আলাদাভাবে মূলধনের হিসাব করা হচ্ছে। নতুন এ নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় পাবে।


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com