শিরোনাম
‘মূর্খদের মতামত দেয়ার জায়গা হল সোশ্যাল মিডিয়া’
প্রকাশ : ১৫ মে ২০১৯, ০৯:৩৯
‘মূর্খদের মতামত দেয়ার জায়গা হল সোশ্যাল মিডিয়া’
বিনোদন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নাসিরুদ্দিন শাহ, এমনই একটা নাম। থিয়েটার থেকে আসা বলিউডের এক নক্ষত্রের নাম। মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে আলাদা ধরনের ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটেছেন তিনি। যাকে অভিনয়ের পাওয়ার হাউস বললেও কমই বলা হবে। অভিনয় তার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থেকেছে সব সময়। মূলত এ কারণেই তাকে বলা হয় ভারতের থিয়েটার থেকে উঠে আসা বলিউড নক্ষত্র।


শৈবাল মিত্রের ‘দেবতার গ্রাস’-এ (‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই প্রথম বড় পর্দায় তিনি। নাসিরুদ্দিন রীতিমতো উত্তেজিত! কলকাতার গরমও তাকে কাবু করতে পারেনি।


বাকিদের হাঁসফাঁস দশা দেখে অবশ্য মুচকি হেসে বললেন, এখানে আসার আগে বিকানীর গিয়েছিলাম। সেখানে ৪২ ডিগ্রি! তাই অসুবিধা হচ্ছে না। তবে গরমের দাপট কিংবদন্তি সহ-অভিনেতা সহ্য করতে পারেননি। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাকে চনমনে করে তোলার ব্রত নিয়ে ফেললেন যেন নাসিরুদ্দিন, ইউ লুক অ্যাবসলিউটলি ফাইন সৌমিত্রদা... চলুন না করে নিই দৃশ্যটা!


এই এনার্জি সংক্রামক। বাকিদেরও শটের ফাঁকে ফাঁকে নানা রকম গল্পে-আড্ডায় মশগুল রাখলেন অভিনেতা। শট শুরু হতে অবশ্য অন্য ম্যাজিক। মানুষটা যেন সেকেন্ডে বদলে গিয়ে সত্তাটাকে ঢেলে দিচ্ছেন চরিত্রে। শিডিউল র‌্যাপের আগেই বসে পড়া গেল সাক্ষাৎকারে।


প্র: আরোও এক বার কলকাতায়... ভাল লাগছে?


উ: আমার এই শহরের প্রেমে পড়তে একটু সময় লেগেছে। বাংলা ছবির শুটিংয়ে যখন প্রথম বার এসেছিলাম, তখন মেট্রো রেলের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট খুঁড়ে রাখা ছিল, যে যেখানে পারছে হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে... এ সব দেখে খুব বিশৃঙ্খল মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে অসম্ভব সুন্দর শহরটা আমাকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে।


প্র: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কত দিনের আলাপ আপনার?


উ: পঞ্চাশ বছর। ‘অপুর সংসার’ দেখেছিলাম যখন, আমার বয়স তখন কুড়ি। তার পরে এত বছর লেগে গেল ওঁর সঙ্গে কাজ করতে। বরাবরই ওঁকে ভাল লাগত। কিন্তু তার চেয়েও বেশি হিংসা হতো। কারণ উনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করতেন। আর আমি সকলকে বলতাম, আমাকে সত্যজিৎবাবু কখনও কোনো ছবিতে নেন না কেন! তারা আমাকে উল্টা বলত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থাকতে তোমাকে নেবে কেন!


প্র: কিন্তু উনি তো আপনাকে একটি ছবিতে নেয়ার কথা ভেবেছিলেন।


উ: হ্যাঁ, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’তে একটি রোলের জন্য আমাকে ভেবেছিলেন। পরে চরিত্রটি করেন ফারুখ শেখ। তবে সঞ্জীবকুমারের চরিত্রটায় আমাকে কাস্ট করতেই পারতেন (হাসতে হাসতে)। সঞ্জীবকুমার তো উর্দুও বলতে পারতেন না। পান খেতে জানতেন না, অঙ্গরাখা পরতে জানতেন না... বোধহয় দাবাটা ভাল খেলতেন!


প্র: ‘দেবতার গ্রাস’-এ আপনি এক জন যুক্তিবাদী উকিল, যিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়ছেন। গত কয়েক বছরে আপনি যে ভূমিকাটা পর্দার বাইরেও করে এসেছেন এবং তার জন্য সমস্যাতেও পড়তে হয়েছে আপনাকে।


উ: সেই জন্যই বোধহয় চরিত্রটাকে এত ভাল লেগে গেল। ভেরি ওয়েল-রিটন ক্যারেক্টার। এই লোকটা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলছে, সেগুলো আমার নিজের কথা। আমাদের দেশেও তো একজন মন্ত্রী ক’দিন আগে বলে বসলেন, বাঁদর থেকেই যে মানুষ হয়েছে, সেটা কেউ নিজের চোখে দেখেনি। সুতরাং ডারউইনের বিবর্তনবাদ মিথ্যা! এ রকম এনকারেজিং মানুষই তো দরকার আমাদের দেশে, তাই না বলুন (ব্যঙ্গাত্মক হেসে)? ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ বা ‘দেবতার গ্রাস’ এই যুক্তিহীনতার বিরুদ্ধেই কথা বলে।


প্র: এই যুক্তিহীন তথ্য, বিভ্রান্তি, কাদা ছোড়াছুড়ি সব লেগেই আছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্বতন্ত্র ভাবনায় বাদ সাধছে ফেসবুক?


উ: সোশ্যাল মিডিয়া মানু‌ষ কেন করে জানেন? একটা স্ক্রিনে নিজের নামটা দেখতে পাওয়ার জন্য। দ্যাটস দ্য থ্রিল। আমি নিজেও অভিনেতা হয়ে পর্দায় নিজের নামটা দেখার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু যাদের কোনো কাজ নেই, সোশ্যাল মিডিয়া তাদেরও এই সুযোগটা করে দিয়েছে। লোকজনকে গালিগালাজ করা, ঘৃণা ছড়ানো, অশ্লীলতা’ এগুলোই তাদের কাজ। এমনকি তার জন্য পয়সাও পাচ্ছে! মূর্খদের মতামত দেয়ার জায়গা হল সোশ্যাল মিডিয়া... কিন্তু এত ঘৃণা মানুষের মধ্যে কী করে আসে বলুন তো? তার মানে এগুলো মনের ভিতরে জমা ছিলই। কালের নিয়মে এখন বেরিয়ে আসছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকেই দেখুন না! এমন সব কথা বলেন, আতঙ্ক হবে। তবু ওঁর একটা পিএমও আছে, সীমা লঙ্ঘন করতে পারেন না তিনি। কিন্তু এই লোকগুলোর তো কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আমাকেই কত লোক বলেছে পাকিস্তানে চলে যেতে!


প্র: বলিউডে একটা বদল আসছে...


উ: লক্ষ করবেন, বলিউডে হয় বিরাট বাজেটের ছবি হচ্ছে, না হলে কম বাজেটের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি। মাঝামাঝি কিছু নেই। বড় ছবিগুলো একের পর এক ব্যর্থ। কিন্তু তাতে কি বলিউডের কোনো শিক্ষা হচ্ছে? নাহ। এক ডজন অভিনেতাকে নিয়ে আরও বড় বড় ছবি বানিয়ে যাবে ওরা... অ্যান্ড হোপফুলি দে উইল কিপ লুজ়িং মানি (মুচকি হেসে)!


প্র: এই প্রজন্মের কোন অভিনেতাদের সম্ভাবনাময় মনে করেন আপনি?


উ: রণবীর সিংহ ইজ ফ্যান্টাস্টিক! সবচেয়ে স্কিলফুল। আয়ুষ্মান খুরানাও খুব বুদ্ধিমান। স্ক্রিপ্ট দারুণ বাছে। রাজকুমার রাও... পঙ্কজ ত্রিপাঠী... ইরফান (খান) যে সুস্থ হয়ে ফের কাজ করছে, তাতে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি।


ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ১৯৮৭ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী ও ২০০৩ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে। ‘স্পর্শ’ও ‘পার’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং ইকবাল ছবিতে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এ ছাড়া তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।


নাসিরুদ্দিন শাহের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে আক্রোশ, নিশান্ত, মিরচ মাসালা, স্পর্শ, ত্রিকাল, আলবার্ট পিন্টোকো গুসসা কিউ আতা হ্যায়, ডার্টি পিকচার, ইশকিয়া ও আরও অনেক। ‘সারফারোশ’ ও ‘ওয়েডনেস ডে’র মতো সিনেমাগুলোয় তার অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসা পায়। এ ছাড়া ছোট পর্দায় ও মঞ্চ নাটকে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার মঞ্চনাটকের দল ‘মোটলে প্রোডাকশনস’ তাদের প্রথম নাটক স্যামুয়েল বেকেটের ‘ওয়েটিং ফর গডো’ -এর মাধ্যমেই এ ক্ষেত্রে প্রশংসা কুড়াতে শুরু করে। সূত্র: আনন্দবাজার


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com