শিরোনাম
বিষাদের আরেক ফাল্গুনে হুমায়ুন ফরীদি
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৩৭
বিষাদের আরেক ফাল্গুনে হুমায়ুন ফরীদি
বিনোদন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বছর ঘুরে শহরে আরো একটি বসন্ত! ভোর থেকেই বসন্তকে বরণ করতে কতো ধরণের অনুষ্ঠান চারদিকে। হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবী পরে তরুণ তরুণীরা রাস্তায় নেমে গেছে। উৎসব একটা আমেজ সবার মধ্যে। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাল্গুনের দিনে সবাই যখন ফাগুন লাগা আগুনে অবগাহনে ব্যস্ত, ঠিক সে সময়ে বিষাদের কালো আভা ছড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন অভিনয়ের কিংবদন্তি পুরুষ হুমায়ুন ফরীদি। কাঁদিয়েছিলেন কোটি ভক্তকে। দেখতে দেখতে ছয়’টি বছর পেরিয়ে গেল। তাকে হারাবার যন্ত্রণা আজও অটুট, আজও সতেজ।জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে ৬০ বছর বয়সে গুণী এই মানুষের না ফেরার দেশে চলে যাওয়া কাঁদিয়েছে সবাইকেই। শুধু অভিনয় দিয়েই মানুষকে বিমোহিত করেছিলেন ডাকসাইটে এই অভিনেতা।


শ্রেষ্ঠত্ব নির্বাচনের কোনো মাপ কাঠি নেই সত্য, তবু হুমায়ুন ফরিদীকে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’ বললে কোনো অত্যুক্তি হওয়ার কথা নয়। তাকে বলা হয় অভিনেতাদের অভিনেতা, একজন আদর্শ শিল্পী। তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত কে না ছিলেন!তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সনদের প্রয়োজন অনুভব করেননি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য ছিলোনা জীবনভর। তার কাছে এ যেন ছিলো, দায়িত্ব পালন শেষে নিজের ঘরে ফেরার মতো বিষয়। পুরো নাম হুমায়ুন কামরুল ইসলাম ফরীদি (হুমায়ুন ফরীদি)। বাংলাদেশের অভিনয় জগতের সবচে বর্নাঢ্য মানুষ। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত অভিনেতা তিনি। মঞ্চ, টিভি আর চলচ্চিত্রে এরকম ভার্সেটাইল অভিনেতা একটিও নেই।


মঞ্চ দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখলেও অভিনয়ের সব স্তরেই বিচরণ করেন এই গুণী অভিনেতা। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সমান তালে তিন দশকের পদার্পণ ছিল তার। অভিনয়ের মাধ্যমে আমৃত্যু ছড়িয়েছেন জীবনের বর্ণীল আলো। অথচ তার ব্যক্তিজীবনটা ছিল পুরোটাই সাদামাটা।


হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯শে মে, ঢাকার নারিন্দায়। তার অভিনয় জীবনের শুরু ছাত্রজীবনে মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘ভবের হাট’ প্রভৃতি ।


প্রথম মঞ্চনাটক কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটকে ১৯৬৪ সালে। মঞ্চে প্রথম নির্দেশনা দেন স্কুল জীবনে, নাম ‘ভূত’। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। টিভি নাটক অথবা মঞ্চে সেলিম আল দীন এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জুটির বাইরে হুমায়ুন ফরীদির সর্বাধিক সংখ্যক এবং সর্বাধিক সফল কাজ ছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। আর ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকে তার অভিনীত চরিত্র কানকাটা রমজানের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।


প্রথম চলচ্চিত্র অভিনয় তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হচ্ছে ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’। বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা। ‘সন্ত্রাস’ ছবির মাধ্যমে খলনায়ক চরিত্র শুরু হয় তার। তিনি ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে। নিয়মিত টিভি অভিনয়ের পাশাপাশি হুমায়ুন ফরীদি তেমন একটা লিখতেন না। তবে কিছু টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটক নির্মাণ করেছেন।


দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক এ মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তখন এ বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। নাম দেবযানি। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে ব্যক্তিজীবন ছাপিয়ে হুমায়ুন ফরীদি সবার প্রিয় অভিনেতা হিসাবে এখনও আবিষ্ট করে রেখেছেন অগুনতি দর্শক-সমালোচকদের।


বিবার্তা/শাহনাজ/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com