একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতায় এই মুহূর্তে তিনি ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নির্দিষ্ট একটি সময়ে তাকে ভারতে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। আবার দেশে ফিরে পেশাগত কাজও করেন তিনি। আবার ছুটে যান ভারতে। এভাবেই যেন চলছে সুজেয় শ্যামের জীবন।

সুজেয় শ্যাম বলেন, দিনগুলো ভালোভাবেই কাটছিলো। ভেবেছিলাম এভাবে সুস্থ থাকতে থাকতেই হয়তো এই সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারবো। কিন্তু কখনো যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবো তা ভাবিনি। আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল নই আমি। যে কারণে এই রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়ানোর কারণে এখন নিশ্চিন্তে চিকিৎসা নিতে পারছি।

‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’র শেষ গান এবং স্বাধীনতার প্রথম গানের সুরস্রষ্টা সুজেয় শ্যাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ গানের সুর সঙ্গীত করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। এই গানের প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়। আরো গেয়েছিলেন কল্যাণী ঘোষ, উমা চৌধুরী, রথীন্দ্রনাথ রায়, তিমির নন্দী, কাদেরী কিবরিয়া, প্রবাল চৌধুরী, বুলবুল মহলানবীশ, রফিকুল আলম, মৃণাল, অসিত, রূপা, মালা।

এরপরও সুজেয় শ্যাম অনেক মুক্তিযুদ্ধের গান সুর করেছেন। যেমন রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম, আয়রে মজুর কুলি, আহা ধন্য আমার জন্মভূমি, রক্ত চাই রক্ত চাই, মুক্তির একই পথ সংগ্রাম ইত্যাদি। ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’র শিল্পী হিসেবে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধার সনদ পান সুজেয় শ্যাম। দীর্ঘদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান প্রচার বন্ধ ছিলো। কিন্তু দেশ স্বাধীনের অনেক বছর পর মেজর জেনারেল আমিন আহমেদের সহযোগিতায় সমর দাশ, আব্দুল জব্বার, আপেল মাহমুদ ও সুজেয় শ্যাম আবারো সবার সামনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ২৪টি গান তুলে ধরেন।

২১০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মুখে। এর সঙ্গীতায়োজন করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। মুক্তা দেবের প্রযোজনায় আল মামুনের লেখায় সুজেয় শ্যামের সর্বশেষ গানের অ্যালবাম ‘এক জনমের ভালোবাসা’। ইউনিলিভারের প্রযোজনায় ২০০৯ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৫০টি গান এই প্রজন্মের শিল্পীদেরকে দিয়ে গাইয়েছেন সুজেয় শ্যাম তারই সঙ্গীতায়োজনে, সহযোগিতা করেছেন পার্থ বড়ুয়া।

বিবার্তা/অভি/জহির