তার অভিনয়ের অনুপ্রেরণা প্রয়াত বরেণ্য অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা। কিন্তু তারসঙ্গে একই ফ্রেমে অভিনয় না করতে পারার দুঃখবোধটা রয়েই যাবে আজীবন। আবার জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী তার অভিনয়ের প্রশংসা করতেন-এটাই যেন অনেক বড় প্রাপ্তি তার অভিনয় জীবনের।
অভিনয়ে অন্তঃপ্রাণ খালেকুজ্জামানের নেশা এবং পেশা অভিনয়। মুক্তিযোদ্ধা এই অভিনেতা আজ ৬৯’এ পা রাখছেন বুধবার। পরিবারের সাথেই জন্মদিন কাটবে তার। বহু নাটকে বাবা চরিত্রের অন্যতম সফল অভিনেতা তিনি। একজন আদর্শ বাবা হিসেবেই দর্শক তাকে নাটকে দেখতে ভালোবাসেন। খালেকুজ্জামানও দর্শকের এই ভালোলাগা ভালোবাসাকে সাথে নিয়ে বাবা চরিত্রে অভিনয়েই নিজের স্বাচ্ছন্দ্যতা খুঁজে পান এখন।
সর্বশেষ বাবা হিসেবে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘বড় ছেলে’ নাটকে বাবা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ই যেন একজন বাবারূপী অভিনেতার সফলতা অনায়াসে বিচার করা যায়। শুধু বড় ছেলেই নয় সাম্প্রতিক সময়ে অনেক নাটকে খালেকুজ্জামান বাবা চরিত্রে এতো অনবদ্য অভিনয় করেছেন যে নিজের বাবাকে হারানো অনেক দর্শকই খালেকুজ্জামানের মাঝে হারিয়ে যাওয়া বাবার ছায়া খুঁজে বেড়ান।
একজন অভিনেতা হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী ই বা হতে পারে। বিষয়টি খালেকুজ্জামানের কাছেও ভীষণ গর্বের, আনন্দের-এমনটাই বললেন তিনি। খালেকুজ্জামানের জন্ম শান্তাহারে। বাবা ডা. শামসুজ্জামান ছিলেন ব্রিটিশ রেলওয়ের মেডিক্যাল অফিসার। মা শায়েস্তা আক্তার জামান ছিলেন গৃহিনী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য ও চারুকলা বিভাগের প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রীধারীদের একজন তিনি। দেশ স্বাধীনের বেশ কয়েকবছর পর খালেকুজ্জামান ১৯৭৫ সালে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। তার আগে স্কুল কলেজ জীবনের তিনি অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন।
বিটিভিতে তিনি প্রথম নওয়াজেশ আলী খানের প্রযোজনায় ‘সর্পভ্রমে রজ্জু’ নাটকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিক নাটক ‘তমা’, ‘বড় বাড়ি’, ‘সময় অসময়’, ‘সুবর্ণ সময়’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। নায়ক রাজ রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে ‘অনিবার্ণ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন বিরতির পর মুরাদ পারভেজ’র ‘বৃহন্নলা’য় অভিনয় করেন। এরপর তিনি শিহাব শাহীনের ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা অনম বিশ্বাসের ‘দেবী’।
অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসা করলেও এখন অভিনয়ই তার পেশা। তবে কষ্টের কথা বলতে গিয়ে খালেকুজ্জামান বলেন,‘ আমরা যারা বাবার চরিত্রে অভিনয় করি তাদের পারিশ্রমিক খুবই কম, এটা সত্যিই কাউকে বলার মতো নয়। একই সময়ে সমান পরিশ্রম দিয়ে নাটকের হিরো হিরোই চারগুন/ পাঁচগুণ টাকা নেবে, এটা আসলে খুব অন্যায়। এটা মেনে নেয়াও কষ্টের। একজন শিল্পী হিসেবে দর্শকের ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এই অন্যায় মেনে নিয়ে আজো অভিনয় করে চলেছি। কিন্তু পারিশ্রমিকের এই বিশাল বৈষম্য আর কতোদিন চলবে?
খালেকুজ্জামান স্বপ্ন দেখেন আরো সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের, যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি যুদ্ধে নেমেছিলেন। খালেকুজ্জামান জীবদ্দশায় সেই পূর্ণ সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ দেখে যেতে পারবেন-এমনটাই আশা রাখেন তিনি।
বিবার্তা/অভি/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]