অনেক আগেই কথা হয়েছিলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে। দেখা হয় ৬ নভেম্বর বিকেলে। রাজধানীর বারিধারার পার্ক রোডে তার নিজস্ব বাসভবনে সেদিন বিকেল চারটায় দেখা হলো তারসঙ্গে।
উদ্দেশ্য ছিলো একজন নতুন প্রতিভাবান শিল্পীর জন্য তার লেখা একটি গান তার কাছ থেকে নেয়া। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বাসায় শিল্পীর আসতে দেরী হচ্ছিলো বিধায় গল্পে গল্পে জানতে চাইলাম, ‘জীবনের গল্প’ ও ‘এই যে দুনিয়া’র পর আপনাকে আর সিনেমা নির্মাণে পাওয়াই গেলো না। আর কী ইচ্ছে নেই সিনেমা বানানোর?
জবাবে মৃদু হেসে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ইচ্ছেতো অবশ্যই আছে। সিনেমা কীভাবে বানাতে হয় সেটা এই প্রজন্মের নির্মাতাদের দেখাতে চাই। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছি। যেহেতু আগের বয়সটা এখন আর নেই। কিন্তু মনের জোরটা আছে। সেই মনের জোরটা দিয়েই কাজটা করবো। আমার মনেরমতো একটি গল্প তৈরী করছি। গল্পের কাজ শেষ হলেই ইচ্ছে আছে শুটিং করার।
কারা কাজ করতে পারেন আপনার সিনেমায়?
জবাবে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, অনেক বিখ্যাত আর্টিস্টরাই কাজ করা বাদ দিয়েছেন। তারা থাকবেন আমার সিনেমায়। যাদের নিয়ে আমি একসময় সিনেমা নির্মাণ করেছি তারা থাকবেন। মূলকথা দর্শককে হলে ফেরানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই সিনেমা নির্মাণ করবো।
এই সময়ের সিনেমায় কী নেই বলে আপনি মনে করেন? গাজী বলেন, আমার কাছে অনেকেই নিজেদের সিনেমার গল্প নিয়ে আসে। অনেকেই এসে বলেন-গল্পটা এভাবে লিখেছি, আপনি যদি একটু ঠিক করে দিতেন। আমি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করি, আচ্ছা সিনেমার গল্প কোনটা? আমিতো গল্পই খুঁজে পাই না। একটি সিনেমার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে গল্প। সিনেমায় যদি গল্পই না থাকে একই বিষয় নিয়ে বারবা দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা হলে দর্শক একই বিষয় দেখতে আর হলে যাবেন না। তাই এমন গল্প দর্শকের সামনে তুলে ধরতে হবে যা দর্শক আগে দেখেনি।
সেটা কেমন হতে পারে? মানুষ যা কল্পনা করে মানুষ যা বাস্তবে দেখতে পায় না মানুষ তা সিনেমায় দেখতে ভালোবাসে। আর তা যখন পর্দায় দেখে তখন মানুষ নিজের মনের মধ্যে সুখ অনুভব করে। মানুষের মনের চাহিদাকে বিবেচনা করে সিনেমার গল্প লিখতে হবে। যেমন খুশি তেমন গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করার দিন শেষ।
এরইমধ্যে গাজী মাজহারুল আনোয়ার শবনমকে নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তার সহশিল্পী হিসেবে কাকে নিয়ে কাজ করলে তা মানানসই হবে-এমন ভাবনায় অনেকটাই পিছিয়ে এলেন তিনি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নাদের চৌধুরী পরিচালিত ‘লাল চর’ সিনেমায় গান লেখার জন্য আবারো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এই গীতিকবি, কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের গর্ব। তার নির্মিত প্রথম সিনেমা ছিলো ‘সমাধি’। মাত্র ১ লাখ ৭ হাজার টাকায় নির্মিত এই সিনেমা লাভ করেছিলো প্রায় ১১ লাখ টাকা। এরপর আরো অসংখ্য সিনেমা তিনি নির্মাণ করেছেন যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘চোর’,‘সন্ধি’, ‘স্বাক্ষর’,‘ সন্ধান’, ‘শর্ত’,‘সহধর্মিনী’,‘স্বাধীন’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘সমর’, ‘স্নেহ’, ‘ক্ষুধা’, ‘তপস্যা’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘রাগী’ ইত্যাদি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা বিখ্যাত অসংখ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘একবার যেতে দে না’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘সাগরের তীর থেকে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘এই পৃথিবীর পরে’, ‘সে যে কেন এলো না’, ‘ও আমার রসিয়া বন্ধুরে’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘ভালোবাসার মূল্য কতো’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’ ইত্যাদি।
বিবার্তা/অভি/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]