চলে গেলেন শাম্মী আক্তার। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় হঠাৎ শরীর খারাপ করলে তাকে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।
তার স্বামী আকরামুল ইসলাম জানিয়েছেন, বুধবার বাদ যোহর শান্তিনগরের চামেলীবাগের আমিনবাগ মসজিদে জানাজার পর শাজাহানপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
আকরামুল ইসলাম আরো জানান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চেয়েছিলো তাকে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু শাম্মী আক্তারের লাশের সার্বিক অবস্থা ভালো না বিধায় দ্রুত তাকে দাফন করা উচিত বলে একটি জানাজার মধ্যদিয়েই তাকে দাফন করা হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের সুরের পাখি শাম্মী আক্তার। পাঁচ বছর ধরে তিনি ক্যান্সারে ভুগলেও মাঝে মাঝে গান গাওয়ার চেষ্টা করতেন। এই বাংলায় জন্ম নেয়াটাই যেন শাম্মী আক্তারের কাছে ছিলো অনেক গর্বের বিষয়। বাংলায় জন্ম নেয়া, বাংলায় কথা বলা, বাংলার মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার মধ্যেই যেন নিজের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেতেন শাম্মী আক্তার। আর তাই যদি আবার জন্ম হয় যেন এই বাংলাতেই হয় এমনটাই আশা পোষণ করেছিলেন বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পী।
শাম্মী আক্তারের গানে হাতেখড়ি বরিশালের ওস্তাদ গৌর বাবুর কাছে। এরপর নানান সময়ে নানান জনের কাছে গানে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রের গানে শাম্মীর যাত্রা শুরু আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার মধ্যদিয়ে।
এই চলচ্চিত্রে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘আমি যেমন আছি তেমন রবো বউ হবো নারে’ এবং ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে’। সত্য সাহার সুর সঙ্গীতে এই দুটি গানের জনপ্রিয়তার কারণে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শাম্মী আক্তারকে।
এরপর শাম্মী আক্তারের চলচ্চিত্রে প্রায় তিনশো গান গেয়েছেন। তার কন্ঠে জনপ্রিয়তা পাওয়া গানগুলো হচ্ছে ‘বিদেশ গিয়া বন্ধু তুমি আমায় ভুইলোনা’, ‘মনে বড় আশা ছিলো তোমাকে শুনাবো গান’, ‘ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাধা যায়না’, ‘এই রাত ডাকে এই চাঁদ ডাকে হায় তুমি কোথায়’, ‘আমার মনের বেদনা বন্ধু ছাড়া বুঝেনা’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী খোদার পরে তোমায় আমি বড় বলে জানি’, ‘আমি যেমন আছি তেমন রবো বউ হবোনারে’, ‘আমার নায়ে পার হইতে লাগে ষোল আনা’ ইত্যাদি।
১৯৭৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আকরামুল ইসলামের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শাম্মী। তাদের দুই সন্তান কমল ও সাজিয়া। দুই নাতি আর্শ ও আরিবের সঙ্গেই সময় কাটতো।
শাম্মী আক্তার নিজের কণ্ঠটাকে সুরের কোমল স্রোতে ভাসিয়ে অন্যরকম এক আনন্দ অনুভব করতেন সবসময়ই। গান করাটা তার কাছে স্বর্গীয় এক অনুভূতি ছিলো। বহু জনপ্রিয় গান দেশীয় চলচ্চিত্র দর্শক শ্রোতাদের উপহার দিলেও অতীতে রাষ্ট্রীয় বড় কোনো স্বীকৃতি পড়েনি এই শিল্পীর ঝুলিতে। অবশ্য পুরস্কার বা পদক নিয়ে এই শিল্পীর ভাবনাটাও একটু ভিন্ন।
জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রথম তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আর এটাই চলচ্চিত্রে গাওয়া তার শেষ গান। আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রিরও ব্যর্থতা যে, শাম্মী আক্তারের মতো শিল্পীর নতুন কোনো গান নিয়ে এ মাধ্যমে কাজ করেননি কোনো অডিও কোম্পানি। অথচ বাজারে হাজার হাজার মানহীন শিল্পীর অ্যালবাম রয়েছে। ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে একই শিরোনামে শাম্মীর গাওয়া পুরনো একটি গান ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য এই চলচ্চিত্রের জন্য পুরনো গানটিই নতুন করে গেয়েছেন শিল্পী। সেই গানের জন্য শাম্মী আক্তারকে ২০১০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া হয়।
বিবার্তা/অভি/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]