শিরোনাম
তামিল ছবির ‘ঈশ্বর’ রজনীকান্তের শুভ জন্মদিন
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৪
তামিল ছবির ‘ঈশ্বর’ রজনীকান্তের শুভ জন্মদিন
বিনোদন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+
রজনীকান্ত একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক। তামিল ছবির ‘ঈশ্বর’ বলা হয় রজনীকান্তকে। অভিনেতার আসল নাম শিবাজী রাও গায়কবাড়। কেউ কেউ তাকে তামিলের থালাইভা বলেও ডাকেন যার বাংলা অর্থ নেতা। আজ এই সুপারস্টারের জন্মদিন। ৬৭ বছরে পা রেখেছেন তিনি। ১৯৫০ সালের এই দিনে তিনি এই পৃথিবীতে এসেছেন।


কিন্তু কোনো ধুমধাম নয়, অন্তরালে থেকেই জন্মদিন পালন করছেন তিনি। একান্তে পরিবারের সঙ্গে আজকের দিনটি কাটাবেন। তবে তার ভক্তরা ধুমধাম করে কেক কেটে পালন করছেন প্রিয় তারকার জন্মদিন।


ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেল, তামিলে আঘাত হানা সাইক্লোন ওকির কারণে জন্মদিনে কোনো উৎসব করছেন না তামিল সুপারস্টার রজনীকান্ত। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে তামিলনাড়ুর ৫০০ মৎস্যজীবী এখনও নিখোঁজ। এ পর্যন্ত ৪০ জনের প্রাণও হারিয়েছে। সেই শোক বুকে নিয়ে তিনি নিভৃতেই উপভোগ করবেন পৃথিবীতে নিজের আগমনী দিনটিকে।



তবে এই প্রথম নয়, গেল দু’বছর ধরে অন্তরালে থেকেই জন্মদিন পালন করছেন রজনীকান্ত। তাই বলে তার কোটি ভক্ত চুপচাপ বসে থাকবে? নিশ্চয়ই না, কারণ তাদের প্রিয় অভিনেতার জন্মদিন বলে কথা। রজনীকান্তের জন্মদিনের একদিন আগে থেকেই শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার পড়েছে চেন্নাই শহরের রাস্তাঘাটে। কিছু পোস্টারে তলোয়ার হাতে রাজকীয় মেজাজে দেখা গিয়েছে রজনীকান্তকে। আবার কিছু পোস্টারে শুধু লেখা, ‘আমরা তোমার সঙ্গে আছি। তুমি এসো থালাইভা (নেতা)।’


রজনী ভক্তরা তাকে শুধু ভালবাসেন না, প্রকৃতপক্ষেই পূজা করেন। সম্পূর্ণ আলাদা স্টাইল ও অসামান্য অভিনয় গুণে কোটি কোটি মানুষের মনে ঠাই পাওয়া রজনী এত বড় তারকা হওয়া সত্ত্বেও মাটির সঙ্গে সম্পর্ক কোনো দিন ছাড়েননি। তাই টাক মাথা, মেকআপহীন বয়স্ক চেহারা নিয়ে তার সাধারণের সামনে বের হতে কোনো অসুবিধে হয় না।


১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর বেঙ্গালুরুতে জন্ম রজনীকান্তের। পারিবারিকভাবে তার নাম রাখা হয় শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। বাবা রামোজি রাও গায়কোয়াড় ছিলেন হাবিলদার। ভারতীয় শহর বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন, রজনীকান্ত অসচ্ছল জীবনের সাথে লড়াই করে কাটিয়েছেন তার শৈশব। মা জিজাবাঈয়ের মৃত্যুর পর চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রজনীকান্ত বুঝতে পারেন, সংসারের অবস্থা ভাল নয়। পরিবারকে সাহায্য করতে একটা সময় কুলির কাজও করেন তিনি।


প্রথম জীবনে বেঙ্গালুরু পরিবহন সেবা বা বিটিএসের বাস হেলপার ছিলেন। বাসের ভেতরেই নাকি তার অসামান্য স্টাইল ফিল্মস্টারদের মতো ছিলো। বাস থামানো বা চালু করার সিগন্যাল দিতে তার সিটি বাজানোও যাত্রী ও অন্যান্য হেলপারদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়।


মঞ্চাভিনয়ে অভ্যস্ত থাকায় চলচ্চিত্র জগতে জায়গা পাওয়ারও ইচ্ছে জাগে তার মনে। পরে তাই হয়ে দাঁড়ায় সংকল্প। বাসের হেলপারের কাজ ছেড়ে চেন্নাইয়ের আদিয়ার ফিল্ম ইনস্টিটিউটে নাম লেখান তিনি। সেখানে একটি নাটকে অভিনয় করার সময় তিনি নজরে পড়ে যান বিখ্যাত পরিচালক বালাচন্দ্রের। তিনিই রজনীকে দেন প্রথম ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব।


১৯৭৫ সালে বালাচন্দ্র নির্দেশিত রজনীকান্তের প্রথম তামিল ছবি ‘অপূর্বা রাগঙ্গাল’ মুক্তি পায়। ছবিতে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে দেশের একনম্বর স্টার হয়েছেন। তাকে টপকাতে পারে এমন কেউ এখনও আসেনি দক্ষিণী ছবিতে। তবুও বিনয়ী রজনী তাকে প্রথম ছবিতে কাজ দেওয়া বালাচন্দ্রকে আজও গুরু মানেন।


বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাসের সহকারী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজ আসেন “মাদ্রাজ ফিল্ম ইনিস্টিটিউট” থেকে অভিনয়ের উপর ডিপ্লোমা পড়ার জন্য। তামিল চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে রজনীকান্ত একসময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে, ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তিনি “ অভিনয় দেবতা” হিসেবে জনপ্রিয় হন। সিনেমায় তার আচরণ এবং সংলাপের ধরন তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।


ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। “শিবাজী” সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি ₹২৬০ মিলিয়ন (US$৫.১৯ মিলিয়ন) সম্মানী নেওয়ার পর তিনি জ্যাকি চ্যানের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।


কলেজ পত্রিকার জন্য তার সাক্ষাৎকার নিতে আসা কলেজছাত্রী লতাকে বিয়ে করেন রজনীকান্ত। ১৯৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিরুপতি মন্দিরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রজনী-লতার দুই মেয়ে ঐশ্বর্যা ও সৌন্দর্যা। লতা ‘দ্য আশ্রম’ নামে একটি স্কুল চালান।


বলিউডেও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন রজনীকান্ত। মেরি আদালত, জন জনি জনার্দন, ভগবান দাদা, ইনসাফ কওন করেগা, চালবাজ-ইত্যাদি নানা ছবিতে তাকে সাদরে গ্রহণ করে বলিউড। অন্য দেশের ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি, করেছেন মার্কিনি ছবিও।



২০০০ সালে পদ্মভূষণ পান রজনীকান্ত। ২০১৪ সালে ৪৫তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়ায় তাকে ভূষিত করা হয় সেন্টেনারি অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্ডিয়ান ফিল্ম পার্সোনালিটি অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারে।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com