শিরোনাম
বলিউডি সিনেমায় প্রেমের ধারা
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১১:২২
বলিউডি সিনেমায় প্রেমের ধারা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জার্মানি এক নাগরিক বলেছিলেন, ‘উপমহাদেশের সিনেমা দেখি সিনেমার গল্পে পর্যাপ্ত আবেগ থাকার কারণে।’ শুধু তিনি নয়, অধিকাংশ বিদেশি এই উপমহাদেশের সিনেমা দেখেন একই কারণে। তাই সব কিছু ছাড়িয়ে রোমান্টিকতা কিংবা প্রেম, উপমহাদেশের সিনেমাগুলোকে আলাদা শৈলীতে উপস্থাপন করেছে। বলিউডের সুপারহিট সিনেমাগুলোর দিকে তাকালেই সে প্রমাণ মিলে।


তবে সময়ের সঙ্গে সিনেমায় একই ধরনের প্রেম কাহিনি চলে আসেনি, প্রেম থাকলেও বদলেছে তার আদল। দিলীপ কুমার, রাজকাপুর, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান হয়ে বলিউডের সিনেমা যখন পৌঁছেছে রণবীর সিং কিংবা রণবীর কাপুরের যুগে। তখনও দেখা যায় সিনেমার গল্প গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রেমকাহিনির উপর। তবে সময়ের সঙ্গে বদলেছে প্রেমকাহিনি। পেয়েছে জনপ্রিয়তাও। বলিউড সিনেমায় বিবর্তিত প্রেমকাহিনি নিয়ে সাজানো হয়েছে এ ফিচার।


ধনী-গরীবের প্রেম: বলিউড সিনেমায় প্রায় চার-পাঁচ দশক ধরে তুমুল জনপ্রিয় ছিল ধনী-গরীব পরিবারের প্রেমকাহিনির দ্বন্দ্বের উপর নির্মিত সিনেমাগুলো। তবে ৯০ দশকের শেষের দিকে এই ধরনের সিনেমাগুলো জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। কারণ তখন সিনেমাতে নতুন ধরনের গল্প আসতে শুরু করেছে। এই ধরনের প্রেমের গল্পে নির্মিত সর্বশেষ ‘মাইনে পিয়ার কিয়া’এবং ‘ববি’বেশ দর্শকপ্রিয়তা কুড়িয়েছিল।



বাগদানের পর অন্যের প্রেমে পড়া: একুশ দশকে এসে এই ধরনের প্রেমকাহিনির উপর গড়ে উঠা সিনেমাগুলো বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করে। কারণ ইতিমধ্যে উপমহাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ভালোবাসার বিয়ের প্রচলন বেশ দেখা যায়। কারণ তখন সমাজ ব্যবস্থায় সন্তান তার পছন্দের মানুষের কথা বাবা-মায়ের কাছে বলতে শুরু করেছে। এই সময়ের সিনেমার মাধ্যমে ব্যাপারটি আরও বেশি প্রসার লাভ করে। যখন সিনেমায় দেখানো শুরু হলো- বাবা-মায়ের পছন্দে অ্যানগেজমেন্ট হয়েছে কিন্তু সন্তান পছন্দ করে আলাদা কাউকে। তখন নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি হয় গল্পে, প্রেমকাহিনি হলেও এগিয়ে যায় নতুন আঙ্গিকে। শাহরুখ খানের ‘দিলওয়ালে দুলহানে লে জায়েঙ্গে’হলো এই গল্পের সর্ব উৎকৃষ্ট প্রমাণ।


পারিবারিক দ্বন্দ্ব: এটা বহু পুরাতন গল্প যা থেকে অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সমান দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই পরিবারের দুই সন্তান। এদের প্রেমের কারণেই নতুনভাবে প্রেমের গল্প একাধিক দিকে মোড় নেয়। তবে ষাটের দশক থেকে নব্বই পর্যন্ত এই গল্প চললেও এখন খুব বেশি দেখা যায় না। এই ধরনের গল্পে নির্মিত সিনেমার মধ্যে ‘সউদাগর, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’সিনেমা দুটি বেশি প্রশংসার দাবিদার। কারণ এই ধরনের গল্পে নির্মিত সিনেমাগুলোর পথ প্রদর্শক বলা হয় সিনেমা দুটিকে। তবে বর্তমানে বংশের পার্থক্যও প্রেমের গল্পে উপজীব্য হতে দেখা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত মাসান সিনেমায় এই ধরনের গল্পের প্রয়োগ দেখা গেছে।


ছোটবেলায় প্রেম, পরে আলাদা হয়ে যাওয়া: এক জায়গায় থাকার সুবাদে ছোটবেলায়ই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এমনটি দেখা গিয়েছে বেশ কিছু সিনেমায়। হিন্দি সিনেমা ‘হাম কিসি সে কম নেহি’তে এই ধরনের গল্প বেশ প্রশংশিত হয়েছিল। পরে অবশ্য বেশ কিছু সিনেমা নির্মিত হয়েছিল এই প্রেমকাহিনির উপর ভিত্তি করে। তবে বলিউডের সিনেমায় এই ধরনের গল্প খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।


বেড়াতে গিয়ে প্রেমে পড়া: রাজা হিন্দুস্তানি হলো বেড়াতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া গল্প নিয়ে নির্মিত বিখ্যাত সিনেমা। এই ধরনের গল্প আসার আগে দেখা যেত- নায়কের সাথে নায়িকার বেশিরভাগ পরিচয় ঘটে স্কুল কিংবা কলেজে। কিন্তু এই সিনেমায় এই ধরনের প্রেমের গল্প সংযুক্ত হওয়ার পর গল্পকার নতুনভাবে গল্প সাজাতে শুরু করেন। দেখা গেল- প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পাচ্ছেন বেড়াতে গিয়ে। পরে বিভিন্ন অভিনেতারা এই ধরনের গল্পে অভিনয় করে বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।


ভালোবাসার জন্য আত্মত্যাগ: বিশ শতকের শেষ প্রান্তে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ভালোবাসার জন্য বিসর্জন দেয়া গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো। তবে সেখানে বন্ধুর জন্য নিজের প্রেমকে বিসর্জন দিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে সিনেমার নতুন মোড় নিতে দেখা গিয়েছে। আবার অনেক সময় দেখা গিয়েছে, ভালোবাসার জন্য সিনেমায় প্রেমিক কিংবা কিংবা প্রেমিকা তার পরিবার বিসর্জন দিয়েছে। এই ধরনের গল্পে নির্মিত সিনেমাগুলোর মধ্যে সাগর, সাজান, এক দুজে কে লিয়া, তেরে নাম ইত্যাদি সিনেমা বেশ প্রশংসার দাবিদার।


আত্মিক প্রেম: যখন প্রেমের একাধিক গল্পের উপর বিভিন্ন সিনেমা নির্মিত হচ্ছে- ঠিক তখনই যশ রাজ চোপড়া ‘ডর’নামের নতুন ঘরানার সিনেমা নির্মাণ করলেন। এক ধরনের থ্রিলার কাহিনির উপর ভিত্তি করে সাইকোলজিক্যাল রোমান্টিক প্রেমের গল্পে নির্মিত সিনেমাগুলো তখন থেকেই বেশ জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।


প্রেম এবং প্রতিশোধ: ভালোবাসার গল্পে সম্পূর্ণ কাহিনি আবর্তিত হলেও অনেক সিনেমায় দেখা গিয়েছে ভালোবেসে ছলনার মাধ্যমে প্রতিশোধ গ্রহণ করা। কিংবা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রেমে পড়ে যাওয়া সিনেমায় নতুন কাহিনির জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে এই ধরনের সিনেমার মধ্যে হেট স্টোরি টু, বদলাপুর, এক ভিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


করুণ কাহিনির মধ্য দিয়ে সিনেমার সমাপ্তি: অনেক সময় দেখা গিয়েছে সিনেমার গল্পে দ্বন্দ্ব এমনভাবে জেঁকে বসেছে সেটাকে আর শেষ করা সম্ভব হয়নি কিংবা শেষ না করেই একটি করুণ কাহিনির মধ্যে সিনেমার সমাপ্তি যেন দর্শককে আলাদা পূর্ণতা দেবে। এইভাবে শেষ হওয়া সিনেমার মধ্যে রকস্টার, দেবদাস, রানজানা, তেরেনাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


বিয়ে ঠিক হওয়ার পর প্রেম: বিয়ে ঠিক হওয়ার পর প্রেম কিংবা বিয়ের পর প্রেমের মাধ্যমে দুজনের মিলন বর্তমান সিনেমায় বেশ দেখা যায়। বেশ কিছুদিন আগে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দম লাগা কে হায়সা’দারুণ উদাহরণ। এ ছাড়া সিলসিলা, কাভি আলভিদা না কেহনা, কিংবা রাব নে বানাদে জোডি ইত্যাদি সিনেমাগুলো বেশ প্রশংশিত হয়েছিল।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com