শিরোনাম
একজন নূর এবং সহশিল্পীদের শুভ কামনা
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:২৫
একজন নূর এবং সহশিল্পীদের শুভ কামনা
ছবি: গোলাম সাব্বির
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আসাদুজ্জামান নূর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রী তিনি। ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলেই তিনি মন্ত্রী হিসেবে আজ বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনকে আলোকিত করছেন। অভিনেতা হিসেবে এক সময়ে দেশের নাট্যাঙ্গন মাতিয়েছেন তিনি। সেই রেশ আজও রয়ে গেছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ হিসেবেও সবার কাছে সমাদৃত তিনি। গুণী এই ব্যক্তিত্ব আগামী ৩১ অক্টোবর ৭০ বছরে পা রাখছেন। ‘বিবার্তা’র পাঠকের জন্য আসাদুজ্জামান নূরকে নিয়ে বিশেষ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন অভি মঈনুদ্দীন।


এখনো একজন মন্ত্রী হিসেবে কোনো অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূর যখন অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন, তখন অনেকেই তাকে ‘বাকের ভাই’ বলে সম্বোধন করেন। মনের গহীন কোনে সেই আহ্বানের ভালোলাগা অনুভব করেন তিনি। সেই কবেকার কথা, কোথাও কেউ নেই ধারাবাহিকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অথচ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দর্শকের মনের মাঝে আজো বাকের ভাই হয়ে বেঁচে আছেন আসাদুজ্জামান নূর। জীবদ্দশায় একজন আদ্যোপান্ত অভিনেতার এর চেয়ে বড় অর্জন আর কী ই বা হতে পারে।


শুধু বাকের ভাই নয়, নূর এমন আরো অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন যেসব নাটকে তার চরিত্রগুলোই প্রাণ পেতো। যেন সেসব চরিত্র তারই জন্য সৃষ্টি করতেন নাটকের রচয়িতাগণ।


আসাদুজ্জামান নূর একজন রাজনীতিবিদ ও আবৃত্তিশিল্পী। তবে এই দুটি পরিচয় ভুলে গিয়েও যদি শুধু তাকে অভিনেতা হিসেবেই আমাদের সামনে বারবার তুলে ধরা হয় তাতেই নূর বাংলাদেশের অভিনয়ের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন অনন্তকাল। এমন জীবন সব শিল্পীর হয় না। কিন্তু নূরের হয়েছে। কারণ অভিনয় আর নূর যেন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব যেন তার ক্ষেত্রে ভাবাই যায় না। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রিয় এই মানুষটি আসছে ৩১ অক্টোবর ৭০ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন।


জন্মদিন প্রসঙ্গে নূর বলেন, ‘এবারের জন্মদিনই শুধু নয়, কখনোই কোন জন্মদিন নিয়ে আমার বাড়তি কোন আগ্রহ ছিলো না। যেহেতু এবার আমি ৭০ বছরে পা রাখতে যাচ্ছি। তাই আমার নাটকের দল থেকে দিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপনের চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আমিই না করেছি। ছোটবেলাতেও আমার জন্মদিনে তেমন বাড়তি কিছু হতো না। শুধু এতোটুকু মনেপড়ে মা আমার জন্মদিনে একটি মোরগ বেশি রান্না করতেন, এই যা। আর তেমনি কিছুই নয়।’


নূরের জন্মদিনে অগ্রীম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের। আলী যাকের বলেন, ‘প্রিয় বন্ধু আমার, জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা। ১৯৭২ সাল থেকে আমাদের বন্ধুত্ব। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বন্ধুত্ব। কিন্তু এই সময়ে এসে আমার বন্ধুটি অনেক অনেক উপরে পৌঁছে গেছে। বাংলার জনগণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যি বলতে কী আজ একটি কথা না বললেই নয় জীবনে কখনো যখন আমি খুব অসহায় হয়ে পড়ি তখন মনে মনে ভাবি কার দিকে তাকানো যায়। ঠিক তখন নূর নিজে থেকেই আমার সেই অসহায়ত্ব অনুধাবন করে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। এটাই হচ্ছে সত্যিকারের বন্ধুত্ব। আমার কিছু প্রয়োজন হলে নূরকে বলতে হয় না। সে তা নিজে থেকেই বুঝে নেয়। এমন বন্ধু সবার জীবনে হয় না।’
কিংবদন্তী অভিনেত্রী দিলারা জামান আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন হমায়ূন আহমেদ’র ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে। এতে দিলারা জামানের ছোট ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান।


নূর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দিলারা জামান বলেন, ‘গত বছরের কথা। কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে তার দেখা। যেহেতু সে এখন মন্ত্রী, তাই তাকে তার প্রোটোকল মেনেই অনুষ্ঠানস্থলে যেতে হয়। কিন্তু আমাকে দেখা মাত্রই সে তার প্রোটোকল ভেঙ্গে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। উপস্থিত দর্শকের মধ্যে যারা এইসব দিনরাত্রির দর্শক ছিলেন তারা বলেছিলেন, বাহ মা ছেলের কী অপূর্ব মিলন। সিনিয়র শিল্পীদের প্রতি নূরের শ্রদ্ধাবোধ শেখার মতো। জন্মদিনে তার জন্য আল্লাহর কাছে দীর্ঘায়ূ কামনা করি।’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালীন সময়েই আবুল হায়াতের সঙ্গে নূরের পরিচয়। ১৯৬৯ সালের কথা। আবুল হায়াত বলেন, ‘নূর খুব ঠাণ্ডা মাথার একজন মানুষ। আমাদের দলে যখনই কোনো সমস্যা হতো নূরই তখন আসলে সেসব সমস্যা সমাধান করতো। সবজায়গায় মানিয়ে চলার মতো ক্যাপাসিটি তার আছে। এটা তার অনেক বড় একটি গুণ। যে কারণে সবাই তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নূর সফল। একদিন যে সে মন্ত্রী হবে সেটা অনেক আগে থেকেই আমরা অনুধাবণ করতাম। তার অভিনয়, আবৃত্তি, ব্যক্তিত্ব সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করার মতোই। অগ্রীম শুভ জন্মদিন প্রিয় নূর।’


রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, ‘এটা সত্যি যে আসাদুজ্জামান নূর দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু তিনি শিল্পী। তাই শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে আরো কী করা প্রয়োজন তা তিনি ভালো বুঝবেন। তবে আমি সত্যিকার অর্থে তাকে অভিনয়ে খুব মিস করি।’


নূরের সহশিল্পী ডলি জহুর বলেন, ‘নূর মন্ত্রী হয়েছেন, দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের উন্নয়নে কাজ করছে। এটা আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের। তবে সেই নূর আর এই নূরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নূর যেমন ছিলেন ঠিক তেমনি আছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় তাকে ফোন করি, খোঁজ নেই। কিন্তু পারি না। কারণ সত্যিইতো আজ তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। নূর আমাদের নাট্যাঙ্গনের অহংকার। আল্লাহ তাকে সবসময় ভালো রাখুন। তার জন্মদিনে অগ্রীম অভিনন্দন।’


হাস্যোজ্জ্বল অভিনেতা জাহিদ হাসান আসাদুজ্জামান নূরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘নূর ভাই সত্যি বলতে বাবার মতো একজন ভাই। তার কাছ থেকে অভিনয়ে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। নূর ভাইয়ের মতো একজন মানুষের সাহচর্য্য পাওয়াটা সৌভাগ্যের। গর্ব করার মতো বিষয়ও বটে। নূর ভাই অনেক সুইট করে হাসেন যা খুব ঈর্ষনীয়। নূর ভাই আমাদের কিংবদন্তী। তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকুন।’


নাটকে এবং চলচ্চিত্রে নূরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত। তিনি বলেন, ‘একজন আসাদুজ্জামান নূর আমাদের নাট্যজগতের ইতিহাসে একজন অগ্রগণ্য নাম। স্বাভাবিক, স্বতস্ফূর্ত অভিনয়ে তিনি অনবদ্য। আর এ কারণেই যেকোনো চরিত্রে তার অভিনয় দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে। তিনি শিল্পের নানান শাখায় সবসময়ই আগ্রহী এবং সম্পৃক্ত। যে শিল্পী সবসময় শিল্পচর্চায় থাকেন অভিনয়ে তার এক্সপ্রেশনে শিল্পের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বিশেষভাবে, যা তার ক্ষেত্রে ঘটে। তার মতো শিল্পীদের এই মুহুর্তে মঞ্চ ও টিভি নাটকের নানান সংকটরকাটিয়ে উঠতে দিক নির্দেশক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখা উচিত।’


দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী তারিন বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো যে এইসব দিনরাত্রি ধারাবাহিকের শেষ পর্বে তারসাথে অভিনয় করার। তখন আমি অনেক ছোট। নূর আঙ্কেল একজন ভালো মনের মানুষ, একজন গুণী শিল্পী, একজন সফল রাজনীতিবিদ। আমার আরো সৌভাগ্য হয়েছিলো যে আমার প্রযোজনায় তিনি একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। যদি আবার কখনো তারোথে অভিনয় করার সুযোগ হয় তাহলে হয়তো অনেক বড় একটি স্বপ্ন পূরণ হবে।’


তারিনের প্রযোজনায় আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকের এবং হুমায়ূন ফরীদি ‘কবি ও যন্তর মন্তর’ নাটকে সর্বশেষ একসাথে অভিনয় করেছিলেন। মন্ত্রী হবার পর আসাদুজ্জামান নূর একটি মাত্র নাটকেই অভিনয় করেছেন। গত ঈদে তিনি মাহবুবা ফেরদৌসের প্রযোজনায় ‘মাটির প্রদীপ’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা।


সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘নূর ভাই হচ্ছেন আমার অন্যতম প্রিয় সহকর্মী। আফজাল হোসেন কিংবা হুমায়ূন ফরীদির মতো নূর ভাইয়ের সথে আমার জুটির আলাদা একটা ম্যাজিক আছে, সেটা আর কোথাও নেই তা প্রমাণিত। ব্যক্তিগতভাবে নূর ভাইয়ের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আমার বাবাকে গুরু মানতেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নূর ভাই আমার খুউব ভালো একজন বন্ধু।’ আসাদুজ্জামান নূরকে জন্মদিনে বিবার্তার পক্ষ থেকে রিইলো অগ্রীম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


বিবার্তা/অভি/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com