
অবশেষে এলো সেই প্রতীক্ষিত সন্ধ্যা। ২১ ডিসেম্বর, শনিবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামের মঞ্চে ওঠেন প্রখ্যাত এই পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী। মঞ্চে উঠেই বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ বাংলায় বললেন শিল্পী। তারপর টানা পরিবেশনায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন শ্রোতাদের।
‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টটি যৌথভাবে আয়োজন করেছিল স্পিরিটস অব জুলাই প্ল্যাটফর্ম ও স্কাইট্র্যাকার লিমিটেড। আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এই কনসার্ট থেকে সংগৃহীত অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে। রাহাত ফতেহ আলী খান ও তাঁর দল গতকালের পরিবেশনার জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেয়নি। কনসার্টের টিকিট বিক্রি থেকে আয়োজক সংস্থা কোনো অর্থ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার বিকেল চারটায় আর্মি স্টেডিয়ামে সিলসিলার কাওয়ালি পরিবেশনা দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়। এরপর মঞ্চে আসেন র্যাপার হান্নান ও সেজান। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল র্যাপ সংগীত। তখন র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’ ও সেজানের ‘কথা ক’ গান দুটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গানটি গাওয়ার জন্য জেল খেটেছেন হান্নান। হান্নান শুরুতে ‘আওয়াজ উডা’ পরিবেশন করেন। তাঁর পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন আরেক আলোচিত র্যাপার সেজান। ‘কথা ক’ শুরু করলে শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলে।
বিরতির পর সাড়ে পাঁচটার দিকে মঞ্চে ওঠে রক ব্যান্ড আফটারম্যাথ। মাইক্রোফোন হাতে ব্যান্ডের ভোকালিস্ট নাভিদ ইফতেখার চৌধুরী শ্রোতাদের বললেন, ‘এর আগে কখনোই আর্মি স্টেডিয়ামে আফটারম্যাথ কনসার্ট করেনি। প্রথমবারের মতো আর্মি স্টেডিয়ামে গাইছি। এবার স্বপ্ন পূরণ হলো।’ কনসার্টে শুরুতেই ব্যান্ডটি গেয়েছে তরুণদের মধ্যে আলোচিত গান ‘অধিকার’।
এরপর ‘উৎসর্গ’, ‘মাটির রোদ’সহ আরও কয়েকটি গান পরিবেশন করেছে আফটারম্যাথ। ব্যান্ডটির ভোকাল নাভিদ আরও বলেন, ‘এমন একটি কনসার্টে সুযোগে পাওয়া গর্বের। আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আমরা অংশীদার হতে পেরেছি, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কিছুটা ভারমুক্ত হতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে। যদিও আত্মত্যাগের কাছে এটা সামান্যই।’
রক গানে আফটারম্যাথের উন্মাদনা ছড়ানোর পর আর্মি স্টেডিয়ামে সুরের মূর্ছনা ছড়াল জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুট। শুরুতে বাদ্যযন্ত্রীরা জাতীয় সংগীতের সুর তোলেন। স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা শ্রোতারা জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপর দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সুমি।
এরপর ‘মরে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহারে জীবন’-এর মতো গান দিয়ে ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ডটি। মোলায়েম সুরের এসব গানে যাতনা খুঁজে খুঁজে ফিরেছেন শ্রোতারা। পরিবেশনা শেষে চিরকুট মঞ্চ ছাড়ার আগে দর্শকেরা মুহুর্মুহু করতালিতে ব্যান্ডটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছেন। সুমি বলেন, ‘মানবিক যেকোনো কাজে চিরকুট সব সময় এগিয়ে এসেছে। স্পিরিট অব জুলাই থেকে এবার যখন আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলো, শোনার পরই আমরা তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। অনেক দর্শকের সঙ্গে সুশৃঙ্খল একটা শো আমাদেরও বেশ ভালো লেগেছে। জুলাইয়ে শহীদদের আত্মা শান্তি পাক।’
‘পথচলা’, ‘দুঃখবিলাস’ ও ‘অনিকেত প্রান্তর’ আর্টসেলের জনপ্রিয় তিন গান। গতকালের কনসার্টে মঞ্চে তরুণদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এ ব্যান্ড পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক গান ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’। বিজয়ের মাসে গানের তালে কনসার্টে তৈরি হয় অন্য রকম আবহ। আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো দর্শক তাঁদের সঙ্গে গলা মেলান।
গানের ফাঁকে মঞ্চে উঠে কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। আরও ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ প্রমুখ। এ ছাড়া আন্দোলনে আহত আতিকুর রহমান, খোকন চন্দ্র বর্মণ, শহীদ আহনাফের মা ও শহীদ সৈকতের বোনও মঞ্চে ওঠেন।
রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন রাহাত ফতেহ আলী খান। দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। মঞ্চে উঠেই পরিষ্কার বাংলায় রাহাত ফতেহ আলী খান বলে ওঠেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ আর্মি স্টেডিয়ামের অগণিত দর্শকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গান ধরলেন, ‘তু না জানে আস পাস হ্যায় খুদা’। এরপর একে একে গেয়ে শোনান ‘সাজনা তেরা বিনা’, ‘ওরে পিয়া’, ‘জরুরি থা’, ‘মেরে রাশকে কামার’, ‘আফরিন আফরিন’সহ তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো।
মাঝে ছেলে শাহজামান ফতেহ আলী খানকে মঞ্চে আহ্বান করেন রাহাত। বাবার সঙ্গে তিনিও গানে অংশ নেন। ‘দমা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে রাত সাড়ে ১১টায় পরিবেশনা শেষ করেন রাহাত ফতেহ আলী। আয়োজনটি উপস্থাপনা করেন জুলহাজ জুবায়ের ও দীপ্তি চৌধুরী।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]