শিরোনাম
অনশন ভাঙল জবি শিক্ষার্থীরা!
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০১৯, ২১:০২
অনশন ভাঙল জবি শিক্ষার্থীরা!
জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবির বিষয়ে জবি প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।


এদিকে সোমবার বিকেলে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান ও তাদের সকল দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। একই দিনে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৭ দফার দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষার্থী ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত দু’দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে আমরণ অনশন করছেন।


তাদের এই দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো—


১ম দফা, (জকসু নির্বাচন): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়ে কোনো ধারা, উপধারা বা গঠনতন্ত্র নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবীর সাথে সহমত পোষণ করে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করার জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাসকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন: অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, প্রক্টর এবং পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস, সহকারী রেজিস্ট্রার (আইন) উক্ত কমিটিতে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি-কে আগামী ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের জন্য সুপারিশ প্রদান ও ‘জকসু’ গঠনতন্ত্র প্রণয়নে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ‘জকসু’ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে বিশবিদ্যালয়ের আসন্ন প্রথম সমাবর্তন শেষে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


২য় দফা, (বাসের ডাবল শিফট্ চালু করণ): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবহনের জন্য বর্তমানে ৩৫টি বাস ও মাক্রোবাস চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে আরো ১০টি বাস এবং ১টি দ্বিতল বাস ক্রয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে বাসগুলি সরবরাহ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে বাসগুলির অন্তর্ভুক্তিতে পরিবহন সমস্যার সমাধান হবে। তাছাড়া অবস্থানগত কারণে এবং পুরান ঢাকার যানযটনের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাসের ডাবল শিফট্ চালু করা প্রায় অসম্ভব। এ প্রেক্ষিতে উপরোক্ত ১১টি বাস পরিবহন পুলে যুক্ত হলে প্রতিটি রুটে বাসের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। ফলশ্রুতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যমান পরিবহন সমস্যার সমাধান হবে।


৩য় দফা, (ছাত্রী হল নির্মাণ): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য “বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল” নামে ১৬-তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে হলে ছাত্রীদের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। উক্ত হলটি নির্মাণের সম্পূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)।


উক্ত নির্মাণ কাজের সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। হলটি চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, হল হস্তান্তরের সময়সীমা আর কোনোভাবেই বৃন্ধি করা হবে না। আশা করা হচ্ছে, উক্ত সময়ের মধেই হলে ছাত্রীদের বসবাসের জন্য সীট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে।


৪র্থ দফা, (শিক্ষক নিয়োগ): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে এই নিয়োগের হার বৃদ্ধি করা হবে।


৫ম দফা, (নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২০০ (দুইশত) একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের জন্য ৯০০ (নয় শত) কোটি টাকা ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান। নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে সে অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে।


৬ষ্ঠ দফা, (ক্যান্টিনের খাবারের মান): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের খাবারের মান ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি করা হয়েছে। হ্রাসকৃত মূল্যে পরাটা, ডিম, ভাজি, খিচুরি, ভাত, সবজি, মাছ, মাংস, ভর্তা, সিংগারা ও চা পাওয়া যাচ্ছে। ক্যান্টিনে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার জন্য নতুন চেয়ার-টেবিল অর্ডার দেয়া হয়েছে। লাইট, ফ্যান, পানির ফিল্টার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার ক্যান্টিন খোলা থাকবে।


৭ম দফা, (গবেষণায় বরাদ্দ): বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু থেকে গবেষণা খাতে বাজেট উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত ২০১৩ সালে এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা। বর্তমানে (২০১৯ সনে) এ খাতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সুতরাং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর গবেষণা বিষয়ে কোনো আর্থিক সংকট নেই। আগামীতে এখাতে বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।


উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন থেকে জকসু নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো। গতকাল থেকে তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসে। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরূপ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।


বিবার্তা/আদনান/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com