জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রতিটি ভবনের দেয়াল ছেয়ে গেছে বিভিন্ন পোস্টারে। এসব পোস্টারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি, কোচিং সেন্টারে ভর্তি পোস্টার, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের লোভনীয় অফার, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, অভিনন্দন, সিট খালি আছে, টিচার দিচ্ছি-নিচ্ছি, বাণিজ্যিক পণ্যেরে বিজ্ঞাপনসহ নানা পোস্টার। পোস্টারে প্রচারণায় হাজারো বিষয়ের পোস্টার মিলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালজুড়ে। অথচ আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া পোস্টার ও দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ।
এসব পোস্টারে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় একরের ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ভবনের দেয়াল, ক্যাম্পাসের অলি গলি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিকতা নষ্ট করে এসব পোস্টার সাঁটানো তারাও বুঝেন কিন্তু মানেন না। পোস্টার ও দেয়াল লিখনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায় পোস্টার অত্যাচারে বিভিন্ন ভবনের এমন বিবর্ণ অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, নতুন ভবনের দেয়াল, শান্তচত্বর, কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন, এমনকি নতুন ভবনের সিঁড়িসহ প্রতিটি ভবনের দেয়াল ঢেকে গেছে বিভিন্ন রংবেরঙের পোস্টারে। যদিও পোস্টার সাঁটানোর জন্য তিনটি বিলবোর্ড আছে কিন্তু এগুলোর প্রয়োগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিক বড়ুয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করে এমন জায়গা থেকে সকল ধরণের পোস্টার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান বাপ্পী বলেন, যেখানে সেখানে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং তা দৃষ্টিকটু লাগে।
দেখা গেছে, জবি ক্যাম্পাসের পুরোনো ভবনগুলোও ঢেকে গেছে এসব হরেক রকমের পোস্টারে। এই পুরোনো ভবনগুলোর দেয়াল জুড়ে সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন পোস্টার। পোস্টারে ঢাকা গেছে প্রতিটি দেয়ালের মুখ। বোঝা যায় না কোন দেয়ালের রঙ কি। ভবনগুলোর এমন পরিস্থিতিতেও নেই কর্তৃপক্ষের কোনো বিকার। এতে একদিকে যেমন হচ্ছে সৌন্দর্যহানি অপরদিকে চালু হচ্ছে দেয়ালে পোস্টার জুড়ে দেয়ার বাজে সংস্কৃতি।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম চলে কিন্তু জবি কেন্দ্রিক ছাড়াও ক্যাম্পাসের বাইরের অনেক পোস্টার সাঁটানো থাকে দেয়ালে দেয়ালে।
পোস্টার নিয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী বলেন, বিপণনের বিশেষ কৌশল হিসেবে একসময় যে পোস্টারের উদ্ভব হয়েছিল কালক্রমে সেই পোস্টার ব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রচারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মার্কেটিং করা উচিত নয়।
জবি শিক্ষক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. মো. শাকিল আক্তার বলেন, ঢাকার যেদিকে চোখ যাবে সেদিকে পোস্টার ও স্টিকারে ভরে আছে। যত্রতত্র দেয়াল লিখনে পরিবেশ হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন। একটি শহরের নান্দনিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা চলে গেলে নগর আর নগর থাকে না। একটা অপরিষ্কার শহরে বিনিয়োগ হবে না, পর্যটক আসবে না, মানুষ স্বস্তিতে থাকবে না।
তিনি বলেন, দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২’ হতে জানা যায়, নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না। আইনের বিধান লঙ্ঘন করে দেয়ালে লিখলে বা পোস্টার লাগানো হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কোম্পানিকে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রযোজ্য হবে।
ক্যাম্পাসের দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, পোস্টার লাগানোর জন্য ক্যাম্পাসে আলাদা বিলবোর্ড আছে। এসব বোর্ডে কেউ ব্যবহার করেন না। তবে আমরা এসব পোস্টার পরিষ্কার করব। সবারই উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখা।
বিবার্তা/আদনান/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]