ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় সোমবার থেকে সন্ধ্যার পরে বহিরাগতদের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ। রবিবার সন্ধ্যায় বিবার্তাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

ড. এ এম আমজাদ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঢাবির ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ এবং ভারী যানবাহন চলচলও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ গ্রুপের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রক্টর জানান, বহিরাগত মানুষদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যাম্পাসের ফুলার রোড, কলা ভবনের সামনের বটতলা, আমতলা, শামসুন্নাহার হলের সামনের ভাস্কর্য, টিএসসি ও শহীদ মিনারের এলাকায় বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হবে। নিদিষ্ট কিছু স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পরে ফুলার রোডে বহিরাগতদের মোটর গাড়ি রেসের কারণে চলাচল করতে অনিরাপদ বোধ করে। মাঝে মাঝেই ফুলার রোডে মোটর গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সোমবার থেকে নিয়মিত অভিযান চালাব। নিদিষ্ট গতিসীমার বেশি গতিতে যারা মোটর গাড়ি চালাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্যাম্পাসের যেসব স্থানে মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে ঐ সব স্থানে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রাখব। কোন ধরনের অশ্লীল কর্মকাণ্ড করলে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ক্যাম্পাসে নিরাপদে চলাফেরার নিশ্চিতের স্বার্থে সোমবার বেলা সোয়া ১২টায় মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনের বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.এম এ আমজাদকে জানালে তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দাবিগুলো মেনে নেন। পরে রাতে মানববন্ধন বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপের এডমিন প্যানেল।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বেধে দেয়া ৫ দফা দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, সন্ধ্যার পরে ফুলার রোড বহিরাগত মুক্ত করতে হবে, ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে যেকোন ভারী পরিবহণ ও লেগুনা নিষিদ্ধ করতে হবে এবং রাত ১০টার পর যেকোন ধরণের বহিরাগত গাড়ি নিষিদ্ধ করতে হবে।

এছাড়াও ‘সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য’ থেকে শাহবাগ থানা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন রাস্তা থেকে গাঁজার অবৈধ ব্যবসা সমূলে উৎপাটন করতে হবে, ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে এবং পলাশী থেকে শহিদ মিনার ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত পুলিশি নজরদারি বাড়াতে হবে, টিএসসির সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে উচ্ছৃঙ্খল বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

দাবিগুলো মেনে নেয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যদি এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান উন্নতি দেখা না যায় তবে আবার আন্দোলন করতে জোর দাবি জানাচ্ছি।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপের এডমিন মোতাকাব্বির খান প্রবাস বলেন, শুধু আশ্বস্ত করলেই হবে বলে না, আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি আশা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা অতীতেও কাজ করেছে, ভবিষ্যতেও কাজ করব।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই অভিযান যাতে অব্যাহত রাখে এজন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিবার্তা/লাভলু/পলাশ