শিরোনাম
জবির পাশেই দেশের সবচেয়ে পুরানো ওভারব্রিজ
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:০৭
জবির পাশেই দেশের সবচেয়ে পুরানো ওভারব্রিজ
জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের ইতিহাস যতটা পুরানো তার চেয়েও বেশি পুরানো পুরান ঢাকার ইতিহাস। আর পুরান ঢাকার ইতিহাসের সাথেই জড়িয়ে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশে পাশের স্থাপনা সমূহ। এরই মধ্যে অন্যতম ও পুরানো হচ্ছে ‍‍‍‍'বাংলাবাজার ওভারব্রিজ' যা দেশের সবচেয়ে পুরাতন ওভারব্রিজ নামেও পরিচিত।


যদিও পথচারীদের সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছে এই চতুর্মুখী ফুট ওভারব্রিজ কিন্তু বাস্তবে সে ওভারব্রিজে পাওয়া যায় না কোনো পদচিহ্ন। কেউ ভুলেও মাড়ান না ওভারব্রিজ। পদচিহ্নহীন এই ওভারব্রিজের দেখা মিলবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের গেট থেকে সোজা তাকালেই সদরঘাট, ইসলামপুর, বাংলাবাজার কিংবা বাদামতলী ঘাট যেতে জনসন রোডের শেষ মাথায়।


পথচারীদের সুবিধার জন্যই অনেক বছর আগে চতুর্মুখী এই ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। ওভারব্রিজটির চারপাশে রয়েছে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান সদরঘাট। সদরঘাট নৌবন্দর দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করেন। পাশাপাশি ঢাকায় অধিকাংশ পণ্য প্রবেশ করে এ বন্দর দিয়েই। এছাড়াও সদরঘাট সংলগ্ন রয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি বৃহত্তম পাইকারি বাজার। ইসলামপুর কাপড়ের পাইকারি মার্কেট, ঢাকার অন্যতম বৃহৎ শ্যামপুর কাঁচাবাজার। বাদামতলী ফলের আড়ত, বাংলাবাজার বই মার্কেট। ফলে সদরঘাটের আশপাশের রাস্তাগুলো জনারণ্য থাকে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।


তাছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি দেশসেরা প্রাচীন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও ফুট ওভারব্রিজের চারটি প্রান্তের মধ্যে দুটিতে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। পশ্চিম পাশে রয়েছে সুমনা হাসপাতাল।


সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছুদিন আগেই নতুন খয়েরি রং আর ফুলের টব লাগানো হয়েছে ওভারব্রিজে। কেউ ওভারব্রিজ পার হওয়ার চেষ্টাও করেন না। ঝুঁকি জেনেও পথচারীরা রাস্তার মধ্য দিয়েই পারাপারের কাজটি সারছেন।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও বাংলা বাজার বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ব্রিজটি ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ওভারব্রিজে উঠা-নামার পথে নোংরা পরিবেশ, রং করলেও উপরে রয়েছে মলমূত্র আর মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের অবাধ চলাচলের কারণে ভয়েই ব্রিজটি ব্যবহার করেন না তারা।


ওভারব্রিজের কাছে গিয়ে দেখা যায়, সিঁড়ির মুখেই রয়েছে বেশ কয়েকটি বইয়ের দোকান, চায়ের দোকান আর রযেছে। যা ঢেকে রেখেছে সিঁড়ির মুখ। এছাড়া বেঁধে রাখা হয়েছে দোকানিদের সাইকেলসহ নানা দ্রব্য। এটা দিনের দৃশ্য হলেও রাতে পাল্টে যায়। সবদিনের আলো নিভে গেলেই তারা ওভারব্রিজে বসে গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকসেবন করে। অনেককে ওভারব্রিজে দিনের বেলাতেও মাদক নিতে দেখা যায়। মাদকসেবীদের পাশাপাশি ভাসমান পতিতাদেরও দেখা মেলে। সন্ধ্যার পর তারা ব্যবসায় নেমে পড়েন।


ওভারব্রিজের মাঝে পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের মূল কাজ হলো জ্যাম যেন না লাগে সেদিকে নজর দেয়া। যদি পথচারীরা ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন তবে জ্যাম কম হয়। রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি, তবে মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো দুর্ঘটনা ঘটে।


পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত কোতোয়ালি থানার এএসআই আব্দুল হক বলেন, অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য ওভারব্রিজ ব্যবহার করে না। ওভারব্রিজে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয় কি না জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, আমরা এ ধরনের কোনো তথ্য পাইনি। তবে কোনো ধরনের তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।


ওভারব্রিজের ব্যবহারসহ সার্বিক বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর রহমান মিয়াজী বলেন, আমরা নিয়মিত ওভারব্রিজটিকে ব্যবহার উপযোগী করে রাখি। এতেও কেউ যদি ব্যবহার না করে তো মানুষকে জোর করে কি বাধ্য করা যাবে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে?


তিনি আরো বলেন, ওভারব্রিজের নিচে অবৈধভাবে গাড়ির স্ট্যান্ড দেয়া হয়েছে। যার কারণে সেখানে জ্যাম লাগে। যেটি সিটি কর্পোরেশন অনুমোদিত না। আমি নিজে কয়েকবার উপস্থিত থেকে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আমি বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েছি।


বিবার্তা/আদনান/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com