দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন।

দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে খ্যাত এই নির্বাচন সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হয়, যা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটে উঠতেই ভোটারদের আনাগোনায় মুখতির হয়ে উঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। স্ব স্ব হলের ভোটাররা তাদের কাঙ্খিত ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। এরপর যাবতীয় ভোটের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে তারা ভোট দিচ্ছে।

জানা যায়, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, শহীদুল্লাহ হলে ২০টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫টি, অমর একুশে হলে ২০টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি, জসীম উদদীন হলে ২০টি, মাস্টারদা সুর্যসেন হলে ৩৫টি, মুহসীন হলে ৩০টি, রোকেয়া হলে ৫০টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫টি, শামসুন্নাহার হলে ৩৫, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২০টি, কুয়েত-মৈত্রী হলে ১৯টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২টি, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২৪টি, জিয়া হলে ২০টি ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ তৈরি করেছে প্রশাসন। আর এই বুথগুলো সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় আনা হয়েছে।

ডাকসু ও হল সংসদের এই নির্বাচনে একজন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৩টি পদে একটি করে মোট ৩৮টি ভোট দিতে পারবেন। এজন্য সময় পাবেন ৩ মিনিট।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রার্থীসংখ্যা ৭৩৮। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫ পদের বিপরীতে ২২৯ জন এবং ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪ পদের বিপরীতে ৫০৯ জন প্রার্থী।

নির্বাচন অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, ডাকসুতে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৩, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১২, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এসব পদের প্রতিটি থেকে একজনকে বেছে নেবেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ডাকসুর ১৩টি সদস্যপদে লড়ছেন ৮৬ জন প্রার্থী। একজন ভোটার সদস্যপদে ১৩ জনকে ভোট দিতে পারবেন।

আর ১৮টি হল সংসদের প্রতিটিতে ১৩টি করে পদে ১৩ জনকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন স্ব স্ব হলের শিক্ষার্থীরা।

এবার ডাকসুতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, কোটা আন্দোলন, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নয়টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রভাবেও ভিপি, জিএসসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে।

এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে ঢাবি ক্যাম্পাসে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে রবিবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টার কড়াকড়ি আরোপ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেছেন ডাকসু ও হল নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে ঘিরে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল পরিবেশ যাতে কোনোক্রমেই বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক থাকবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

বিবার্তা/রাসেল/জাকিয়া

>>রাত পোহালেই ডাকসু নির্বাচন : আলোচনায় যারা