শিরোনাম
জাবিতে র‌্যাগিং বন্ধের দাবি শিক্ষকদের
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০৩
জাবিতে র‌্যাগিং বন্ধের দাবি শিক্ষকদের
জাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের নামে মানসিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় হল প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগকে সম্পৃক্ত করে এবং হলগুলোতে দিনে ও রাতে শিক্ষকদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করার দাবি জানান তারা।


রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ (একাংশ), বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে সংগঠন ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি জানানো হয়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, বছরের পর বছর ধরে র‌্যাগিং নামক নির্যাতন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার পরিবেশ গ্রাস করছে। হলের ‘গণরুম’সহ বিভিন্ন পরিসরে নবীন শিক্ষার্থীদের কুৎসিতভাবে মৌখিক পীড়ন, গালিগালাজ, মানসিক নির্যাতন ও শারীরিক নির্যাতন এমনকি যৌন নিপীড়ন পর্যন্ত হয়ে থাকে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি হবার কথা সেখানে র‌্যাগিং এর কারণে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়ে নতজানু হয়ে চলতে শিখাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।


তিনি আরো বলেন, নবাগত শিক্ষার্থীরা প্রথম বছর অতিবাহিত করতে হয় হলের গণরুমে। সংকীর্ণ জায়গায় গাদাগাদি করে মেঝেতে ঘুমাতে হয়। নেই বইপত্র, কাপড়-চোপড় রাখার মত কোন জায়গা। দেয়ালে অপাঠ্য ও কদর্য গালাগালি লেখা থাকে নানা হরফে। ‘বড় ভাইরা’ হলের যেসব বারান্দা বা টয়লেট ব্যবহার করবে সেসব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্দিষ্ট টয়লেট ও গোসলখানা ছাড়া অন্যসব নবীনরা ব্যবহার করতে পারেনা। তাই আমরা মনে করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণরুম’ নামক ব্যবস্থা চালু থাকাটা যে কোনো অর্থেই অগ্রহণযোগ্য।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, র‌্যাগিং প্রতিরোধে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর দিন আমরা নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা করবো। হলগুলোতে এক মাস সকল হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউজ টিউটরদের মধ্য থেকে দুই থেকে তিনজন করে সন্ধ্যা থেকে রাত একটা পর্যন্ত এবং রাত একটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত হলে অবস্থান করবে এবং পরিদর্শন করবে। এরপরেও কোথাও র‌্যাগিং হচ্ছে এমন কোনো তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। এছাড়া র‌্যাগিং বন্ধে প্রক্টরিয়াল টিমের টহল বাড়াবেন বলেও জানান উপাচার্য।


সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, জাকসু ও ডিনসহ সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালু করতে আমরা একাধিকার উপাচার্যের সাথে সাক্ষাত করে নির্বাচনের দাবি জানাই। কিন্তু উপাচার্য এসব বিষয়ে ‘ভাববেন’ বলেই বিষয়গুলো বরাবরই এড়িয়ে যান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাঠামো থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের নেতাকর্মীদের সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণসহ একাধিক পদে আসীন আছেন বিভিন্ন অনেক শিক্ষক। তাদের মেয়াদ শেষ হলেও ওই প্রশাসনিক কাঠামোতে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বুঝাই যাচ্ছে এটি উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবেই উপাচার্য তার নিজ অনুসারীদের দায়িত্বে রেখে স্বৈরাচারী রূপ নিচ্ছেন।


উপাচার্য অধ্যাপক ফরাজানা ইসলাম বলেন, প্রত্যেক প্রশাসন তার বিশ্বস্তকে রাখবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তা না হলে প্রশাসন অচল হয়ে যাবে। আমার কথা বুঝবে, শুনবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করবে এমন লোকেরাই স্থান পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস আরো বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের বিদায়ী সম্পাদক ও বর্তমান সম্পাদকের নেতাকর্মীদের বিবাদে ক্যাম্পাসে আগ্নেয়াস্ত্রেও শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত বিষয়টিকে খতিয়ে দেখা এবং এর সূত্রে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করা।


সংগঠনটির আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শামছুল আলম, শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক মো. সোহেল রানা, অধ্যাপক ফরিদ আহমদ, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/জোবায়ের/আকবর/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com