শিরোনাম
ইতিহাস বিকৃতিকারী ঢাবির সেই শিক্ষক পার পেয়ে যাচ্ছেন!
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:০২
ইতিহাস বিকৃতিকারী ঢাবির সেই শিক্ষক পার পেয়ে যাচ্ছেন!
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বারবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।


জানা যায়, এই শিক্ষক পৃথকভাবে দুই বার গণমাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধুর শাসন আমল নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য পরিবেশন করেছেন এমন অভিযোগ উঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি তার পদাবনতি দিয়ে বিভাগে আবার বহাল রাখার সুপারিশ করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।


ইতিহাসবিদরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন বিষয়ে বারংবার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। যদি ইতিহাসবিকৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া হয়, তাহলে পুনরায় একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।


প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় জ্যোতির্ময় জিয়া শিরোনামে এক নিবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোরশেদ হাসান খান লেখেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশিরভাগই তাদের পরিবার পরিজন সহ ভারতে চলে গেলেন, এ দেশবাসীকে মৃত্যু ফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত, সেই শেখ মুজিবুর রহমানও। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর, তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। পরে অবশ্য তিনি লেখাটির জন্য ক্ষমা চান এবং লেখাটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।



এর আগে ২০১৬ সালে ৩০ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় স্মৃতিময় জিয়া শিরোনামে এক লেখাতেও অধ্যাপক মোরশেদ হাসান খান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অবমাননা করেছিলেন। এতে তিনি লিখেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক-হানাদার বাহিনী যখন এ দেশের নিরীহ-ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, তখন আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে পালিয়ে যান। শেখ মুজিবুর রহমানও এ দেশবাসীকে মৃত্যুর ফাঁদে ফেলে দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন।’ এই লেখার জন্য অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ক্ষমাও চাননি, লেখাটি প্রত্যাহারও করেননি।


গত বছরের ২৬ মার্চের ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ২৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারা মোরশেদ হাসান খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং ক্যাম্পাসে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরের দিন ছাত্রলীগ অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশের বাইরে থাকায় স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। ছাত্রলীগের তিন দফা দাবি ছিল- অভিযুক্ত শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্থ করা, আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা, অভিযুক্ত শিক্ষককে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমতা চাওয়া।


কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘসূত্রিতার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে গণমাধ্যমে রিপোর্ট হলে কর্তৃপক্ষ গতবছরের ২৮মে ঘটনাটি তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিকৃতি করার জন্য অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে পদাবনতি দিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে বহাল করার সুপারিশ করা হবে বলে গুঞ্জন উঠেছে।


এবিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য এস এম বাহলুল মজনুন চুন্নু বলেন, আমরা এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেইনি। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি একটি মিটিং আছে। তারপরে আমরা বলতে পারব, কি হবে। এসময় তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্ত দিলে সেটা আবার সিন্ডিকেটে যাবে। সেখানে আমরা চিন্তা করব কি করা যায়।


এবিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আরো কিছু কাজ বাকি আছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি।



এদিকে, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম জন্মবার্ষিকীর স্মরণিকায় ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। এই স্মরণিকায় স্মৃতি অম্লান শিরোনামে একটি নিবন্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই ঘটনায় স্মরণিকার সম্পাদক ও ওই নিবন্ধের লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে ট্রাইবুন্যাল গঠন করে চাকরিচ্যুত করা হয়।


কিন্তু একই ধরনের অপরাধ বারবার করা সত্ত্বেও অধ্যাপক মোর্শেদকে শুধুমাত্র পদাবনতির সুপারিশ করা হবে গুঞ্জনে শিক্ষক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তারা বলছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে বেঈমানি।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেও পার পেয়ে যায় এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নৈতিক দুর্বলতার কারণে এমনটাই ঘটছে। এটাকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো মৌলিক বিষয় নিয়ে যারা আপত্তিকর মন্তব্য করেন তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা উচিত না এজন্যে তারা শিক্ষার্থীদের মন মানসিকতায়ও বিব্রত করবে।


ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, পূর্বের ছাত্রলীগ যে দাবি জানিয়েছিল, আমরাও সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। ওই শিক্ষককে যেন পুনরায় বহাল না করে আমরা সেই দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব।


উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট ‘জিয়া নয়, বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক বলে রায় দেয়। হাইকোর্টের রায়কে অবমাননা করে বারবার এমন ইতিহাস বিকৃতি করলেও সংশ্লিষ্ট পক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।


এবিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।


বির্বাতা/রাসেল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com