শিরোনাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:২৬
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত
জাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গৌরবের ৪৮ বছর পার করল দেশের একমাত্র আবাসিক ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শীতের অতিথি পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে সাতশ’ একরের (২.৮ বর্গকিলোমিটার) সবুজ ক্যাম্পাস। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ব্যাপক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দিনব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়।


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালের তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যকরী সংসদ এরূপ একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই সময়ে ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের সালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করে আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে ১৯৬৭ সালে রাজধানী ঢাকা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প প্রধান হিসেবে ড. সুরত আলী খানকে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’। এ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. মফিজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেন।



১৯৭০ সালে ‘জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’ অধ্যাদেশের আওতায় অর্থনীতি, ভূগোল ও পরিবেশ, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগ ২১ জন শিক্ষক আর ১৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হলেও ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস করা হয়। এই অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’।


বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের অধীনে ৩৬টি বিভাগে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। এছাড়া রয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান গবেষণার জন্য নির্মিত ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র, মেডিকেল সেন্টার, স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং অ্যান্ড গাইডেন্স সেন্টার ও এক্সিলেনস ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং সেন্টার।


একটি মাত্র আবাসিক হল দিয়ে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেখানে বর্তমানে নবনির্মিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল নিয়ে আবাসিক হলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আবাসিক সুবিধা দিয়ে আসলেও বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো, সেশন জ্যাম তীব্র সিট সঙ্কট রয়েছে।


সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের সংস্কৃতি রক্ষায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র থেকে অনুমোদিত ১৫০টিরও বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে যার মধ্যে অর্ধ শতাধিক সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, বিতর্ক সংগঠন জেইউডিও, আনন্দন, নৃত্য সংগঠন কালবৈশাখী, জলসিঁড়ি, সুস্বর, ধ্বনি উল্লেখযোগ্য।



একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়েই বছরে দুইবার নাট্যপার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া হিম উৎসব, পাখি ও প্রজাপতি মেলা, বসন্তবরণ ও পয়লা বৈশাখ বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় পালিত হয়। ফলে বছরব্যাপী নানান আয়োজন ও উৎসবে মুখরিত থাকে ‘সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ’।


সবুজ বনভূমির ফাঁকে ফাঁকে লাল ইটের তৈরি ইমারতে সুসজ্জিত অন্যান্য ভূদৃশ্যাবলিযুক্ত বৈচিত্র্যময় দেশের একমাত্র এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে যেমন নিজস্ব স্বকীয়তা তেমনি রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে পাশাপাশি রয়েছে উন্নত কারিকুলামে পাঠদান পদ্ধতি। অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞানমনষ্ক এবং আন্তর্জাতিকমানে উন্নতি লাভ করবে বলে প্রত্যাশা সর্বমহলে।


এদিকে ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আমির হোসেন। পরে উপাচার্য বেলুন উড়িয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন।



উদ্বোধনী ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে যে সম্মান অর্জন করেছেন তাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে ৫০ বছরে পা রাখবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের এখন ভাবতে হবে ৫০ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে কিরকম দেখতে চাই? ইতোমধ্যে জাবির অধিকতর উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে।’


উদ্বোধন শেষে বিজনেস স্ট্যাডিজ অনুষদের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি ও শিক্ষকমন্ডলী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা, শিক্ষক সমিতি, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য, অফিসার সমিতি, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি, জাবি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।


এছাড়াও বেলা ১২টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বেলা আড়াইটায় পুতুল নাট্য, বিকেল পাঁচটায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। সন্ধ্যা ৭টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে লোকসঙ্গীত সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।


বিবার্তা/জোবায়ের/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com