স্থাপনের এক বছর পেরোতেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। ভাস্কর্যটির নানা স্থানে রং ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, উঠে গেছে আস্তর, দেখা দিয়েছে ছোট বড় ফাটল। এ অবস্থায় তৃতীয়বারের মতো চলছে ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ।
ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হককে গত ১৫ নভেম্বর সংস্কার প্রসঙ্গে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ১৮ নভেম্বর থেকে ভাস্কর্যের সংস্কারকাজ শুরুর জন্য বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে ভাস্কর মৃণাল হক বলেন 'ভাস্কর্য নিয়ে অনেক ঝামেলা পাকিয়েছে, অনেক যন্ত্রণা করেছে; অনেক অত্যাচারও করেছে। এখন এই ভাস্কর্য নিয়ে আমি কোনো কথা বলবো না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে ওখানে। আমাকে তারা (প্রশাসন) রঙ করার জন্য তাগাদা দিয়েছে বারবার। সাত-আট মাস আগে আমি লোকজন পাঠালে তাদেরকে তারা শীতের ভেতর বাথরুমে আটকে রেখেছে!'
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই শিল্পী বলেন, 'এরা চাঁদা তুলতে আসে, ওরা চাঁদা তুলতে আসে, চাঁদা না দিলে পিছে লাগে, আমার লোককে আটকে রাখে, বেঁধে রাখে, কাজেই এই ভাস্কর্যে এখন কী কী প্রবলেম; রঙ করে দিতে বলেছে, রঙ করতে লোক পাঠিয়েছি। কাজেই এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।'
ভাস্কর্যটির শিল্পী মৃণাল হক এটি নির্মাণ করতে গিয়ে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। একই কারণে নানা মহল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনকেও দায়ী করা হয়েছে।
২০১৭ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ শুরু হয়। দুই দফায় ১০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি। টেন্ডার প্রক্রিয়াকে কৌশলে এড়িয়ে ভাস্কর মৃণাল হককে ভাস্কর্য স্থাপনের কাজটি দিতে দুই অর্থ বছরে বরাদ্দ প্রদান করা হয় বলে অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ নিয়েই প্রথমবার ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নির্ধারিত মাপ ও নকশা অনুযায়ী ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়নি। এমন অভিযোগ তোলে শিক্ষকদের একটি অংশ। পরে একই বছরের আগস্টে পুরনো ভাস্কর্যটি সরিয়ে নতুন করে বর্তমান ভাস্কর্যটি স্থাপন করে ১৫ আগস্ট এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী আশরাফ। কিন্তু স্থাপনের চার মাসের মধ্যেই (চলতি বছরের শুরুর দিকে) ভাস্কর্যে ফাটল দেখা দেয়। সেই ফাটল একদফা সংস্কার করা হলেও এবার নতুন করা দেখা দিয়েছে ফাটল; একইসাথে উঠে গেছে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটির রং ও আস্তর।
সংস্কারকাজ শুরু হয় গত ২৬ নভেম্বর (সোমবার) দুপুরে। ভাস্কর মৃণাল হক প্রেরিত সংস্কারকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রমিকরা জানান, ২৮ নভেম্বরের (বুধবার) মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ করতে পারবেন তারা।
ভাস্কর্যে কেন সংস্কারকাজ করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আগে যে রং দেওয়া হয়েছিল সেগুলো ভালো করে দেওয়া হয়নি। এজন্য জায়গায় জায়গায় রং ও আস্তর ওঠে গেছে। রং ও আস্তর উঠে যাওয়ার পাশাপাশি ভাস্কর্যে ফাটলও দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহেরের মন্তব্য নেওয়ার জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বিবার্তা/সোহাগ/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]