শিরোনাম
ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে আলোচিত হৃদয়
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৫৯
ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে আলোচিত হৃদয়
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে আসা নেত্রকোনার শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিলেন। আর এ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।


গত ২১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে আসে হৃদয় সরকার। সেই দৃশ্য ধরে রাখতে মোবাইলে ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এম এ আল মামুন (বাইনারী)। ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে তোলা হয় বলে জানান মামুন। এরপর ছবিটি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছেলেটির সমস্যা হলো সে হাঁটতে পারে না। এছাড়া তার হাতের সব আঙ্গুলও কাজ করে না। তাই মা ছেলেকে কোলে করে নিয়ে আসেন ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। আর সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।


এদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘খ’ ইউনিটের প্রকাশিত ফলাফলে হৃদয় সরকার ৩৭৪০তম হয়ে ফের ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছেন। পাশ করলেই কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী কোটা পাওয়া যায়। আর তাই আশা করা হচ্ছিল, তিনি ঢাবির ভালো একটি বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু বিষয় পছন্দের জন্য ভাইভা দিতে এসে হৃদয়ের হৃদ ভেঙ্গে গেলো! তাকে ডিন অফিস থেকে জানানো হলো,
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটার আওতায় বাক, শ্রবণ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্থান রয়েছে। কিন্তু হৃদয় সরকার সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে ভর্তি করা সম্ভব নয়।


আর এ ঘটনা বেশকিছু গণমাধ্যমে আসে। যা দেখে চিকিৎসকসহ মানবাধিকারকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা সরকারি আইন অনুযায়ী শ্রবণ, বাক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর বাইরেও যারা প্রতিবন্ধী, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে প্রতিবন্ধী কোটা না পাওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গত ৬ নভেম্বর বিবৃতি দেয়।


আর এ বিবৃতির একদিন পরে ৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত ডিন’স কমিটির বৈঠকে এ বিবৃতির বিষয়ে আলোচনা হয়।


আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর বাইরেও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছুদের প্রতিবন্ধী কোটা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে উপস্থিত একাধিক ডিন সদস্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। আর এ সিদ্ধান্তের কারণে আলোচিত হৃদয়ও ঢাবিতে পড়ার সুযোগ পাবেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে এমন সংবাদ জানালে হৃদয় সরকার বিবার্তাকে বলেন, আমি প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। তারা যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তারা অনুপ্রেরণা পাবে। তারা ভাববে যে আমি যদি পড়ালেখা করি তাহলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়তে ভর্তি হতে পারব। আমি মনে করি এই অনুপ্রেরণায় যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তারা আরো অনুপ্রেরণা পাবে।


হৃদয়ের মা সীমা সরকার বলেন, আমার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে আমি কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতাম। এমনকি এইচএসসিতেও তার ফাইনাল পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছিলো তিনতলায়। কিন্তু ও তো হাঁটতে পারে না, নিজে চলতে পারে না! ফলে আমি নিজেই ওকে তিনতলায় উঠা-নামা করাতাম।


তিনি বলেন, হৃদয়ের ছোট বেলা থেকেই অনেক লোকে আমাকে বলে আসছে, সে হাঁটতে পারে না, বসতে পারে না; ওকে দিয়ে পড়াশুনা হবে না। কিন্তু আমি কোনো কথা শুনি নাই। আমার খুব স্বপ্ন ছিল তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে পড়াব। আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এখনো আমি হাতে কাগজ পাইনি, পেলে আরো খুশি হবো। ডিন স্যার, ভিসি স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।


এদিকে হৃদয় সরকার ও তার ত্যাগী মায়ের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় হৃদয়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হৃদয়ের ছবি দিয়ে কেউ কেউ ফেসবুকে লেখেন, মায়ের এ ত্যাগ, ভালোবাসা হারতে পারে না, তাই হৃদয়ও হারেনি। আবার কেউ লেখেন, মা যে মমতাময়ী, হৃদয়ের মা তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।


বিবার্তা/রাসেল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com