শিরোনাম
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮ শিক্ষকের পদত্যাগ
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২১
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮ শিক্ষকের পদত্যাগ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে একসাথে ৪৮জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।


এর মধ্যে দুই জন রিজেন্ট বোর্ড সদস্য, চারজন ডিন, চারজন প্রভোস্ট, ১৪ জন বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সকল হাউজ টিউটর, সকল সহকারী প্রক্টর রয়েছেন বলে জানা গেছে।


অভিযুক্ত ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে বিচার না পাওয়ায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ৪৮ জনের পদত্যাগ পত্র রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদুল ইসলামের কাছে জমা দেয়া হয়।


জানা যায়, গত শনিবার ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ। এ পরীক্ষায় ঈশিতা বিশ্বাস নামে একজন উন্নীত হতে পারেনি। তার ফলাফল ৪ এর মধ্যে ১.৯৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২.২৫ পেলে উন্নীত হতে পারবে।


পরীক্ষায় ফলাফল ১ দিন আগে ঘোষণা করায় এটিকে অধ্যাদেশবিরোধী উল্লেখ করে ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স-১ পরীক্ষায় ঈশিতার পক্ষ হয়ে তাকে জোরপূর্বক পরীক্ষার সিটে বসিয়ে দেন। এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার অনুমোদন না থাকায় শিক্ষকরা এ বিষয়ে বাধা দিতে গেলে সজীব তালুকদার উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক ড. আনোয়ার হোসেন এবং মহিউদ্দিন তাসনিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাদেরকে মারতে উদ্যত হন।


এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঈশিতাকে পাহারা দিয়ে সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করায়।


ঈশিতার পরীক্ষা শেষ হলে শিক্ষার্থীদের ডেকে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। এ সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ করা হয়।


এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে জরুরি সভা ডাকে শিক্ষক সমিতি। সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব তালুকদার, সহ-সভাপতি ইমরান মিয়া, সহ-সভাপতি আদ্রিতা পান্না ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাবির ইকবালের বিচারের দাবি জানানো হয়।


মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও ১৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর দুইটি আবেদনে এই চার জনের বিচারের দাবি জানানো হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলরের কক্ষে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকদের নিয়ে সভা করা হয়।


সভার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে এসে প্রতিটি হল থেকে ছাত্র-ছাত্রী বের করে অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে।


অর্ডিন্যান্স হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া ক্লাস পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি, ফলাফল পদ্ধতি।


এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ভাইস চ্যান্সেলর অফিস থেকে বৈঠক করে জানান, স্যাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের ব্যাপারে। আমরা সকাল ৯টায় ছাত্র-ছাত্রী স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর জমা দেব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এরপর ছাত্র-ছাত্রীরা হলে ফিরে যান।


ছাত্র-ছাত্রীরা চলে যাবার পর ভাইস চ্যান্সেলরের কনফারেন্স রুমে বিচার না পাওয়ার কারণে মধ্যরাতেই শিক্ষকরা একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।


অন্যদিকে রাতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলে ফিরে গেলে সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ছাত্রলীগের নেত্রীরা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমানকে জানায়।


পরে সজীব তালুকদার ও সাইদুর রহমান ছাত্রী হলের ভেতরে গিয়ে অন্যান্য ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে সজীব ও সাইদুরকে সাধারণ ছাত্রীরা হল থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে ছাত্রলীগের নেত্রীদের হলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেন।


এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ শাহীন উদ্দিন বলেন, আমরা সঠিক বিচার না পাওয়ায় সোমবার দুপুরের দিকে শিক্ষককরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমরা এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।


এ ব্যাপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের ড. মো. আলাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com