জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুই শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ‘ইউনিট-২’ (মানবিক শাখা)-এর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক মেয়েকে তারা যৌন হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্তরা হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২য় সেমিস্টারের ছাত্র জয়নুল আবেদীন ও একই বিভাগের মোবারক ঠাকুর প্রিন্স।
শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পানে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করে তাদের পুলিশে সোপার্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী পুলিশকে বাধা দেয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল টিম গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী ওই মেয়ের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, পরীক্ষা শেষে বিজ্ঞান অনুষদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো সে। এ সময় অভিযুক্ত দু'জন আমাকে ডেকে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইশারা করে কুরুচিমূলক মন্তব্য করে। এতে মেয়েটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শুধু অশালীন মন্তব্য করেই থামেনি অভিযুক্তরা। মেয়েটির ওড়না পরিধান না করারও কারণ জানতে চায় তারা। এমনকি মানিব্যাগ থেকে ওড়না কেনার টাকা বের করে দিতে চায়। এ সময় সর্বোচ্চরকম অশালীন কথা বলে তারা।
ওই মেয়ের অভিভাবক তারই বড় বোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, এমন আচরণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চরম হতাশাজনক। আজকের দিনেও যখন নারীরা স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার রাখে না, এটা মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য। আমি চাই না আমার বোনের মত আর কারো সাথে এমন আচরণ করা হোক। আমাদের চলাচলের নূন্যতম স্বাধীনতাটুকু নিশ্চিত হওয়াই আমাদের দাবি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রের বিরুদ্ধে একজন নারী ভর্তিচ্ছুর সাথে অশালীন আচরণের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের কোতয়ালী থানায় সোপার্দ করেছি। এছাড়া আগামী কর্মদিবসে সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুলিশের গাড়ি ঠেকানোর বিষয়ে প্রক্টর বলেন, আমি তাদের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলবো না। যারা পুলিশের গাড়ি অবরোধ করার চেষ্টা করেছিল তারা অভিযুক্তদেরই বন্ধু-বান্ধব ছিল। তারা চেয়েছিল যেন ঘটনাটি ক্যাম্পাসেই মীমাংসা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, যারা অন্যায় করবে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। সে যেই হোক না কেন। তবে যদি অভিযোগকারী এবং পুলিশ মনে করে যে, তাদের ছেড়ে দিলে আর এমন অন্যায় করবে না তবে তাকে ছেড়ে দিতে পারে।
অভিযুক্তদের পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, তারা থানা হাজতে রয়েছে। তবে যদি কেউ থানায় অভিযোগ না করে তাহলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কারণ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা আমাদের কাছে না বললে আমরা কী ব্যবস্থা নেব আর কার বিরুদ্ধে নেব?
বিবার্তা/আদনান/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]