বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমমান বজায় রেখে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করার আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। অতএব, বিশ্বমান বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করতে হবে।'
শনিবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির অমিত শক্তি যুবসমাজ। যুবসমাজের শক্তি ও সম্ভাবনাকে দেশ গঠনের কাজে লাগাতে হবে। উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে আচার্য বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর অনেক জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছে। এসব আলোকিত গুণীব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে তরুণ শিক্ষার্থীরা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে- এ বিশ্বাস আমার আছে তোমরা সফল হও। আমি তোমাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করি।'
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে আবদুল হামিদ বলেন, ‘তোমাদের আজকের এই অবস্থানের জন্য তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষক, সমাজ, দেশ ও জনগণের বিপুল অবদান। তোমরা এসবের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে মেধা, প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে জাতির আশা পূরণে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখবে। নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও বিবেক জাগ্রত রাখবে। অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথানত করবে না। মনে রাখতে হবে সমাবর্তন শিক্ষার সমাপ্তি ঘোষণা করছে না, বরং উচ্চতর জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করছে।’
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। শহীদ ড. শামসুজ্জোহাসহ আরও অনেক শিক্ষকের রক্তের স্বাক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ ডিগ্রি অর্জন শেষে আপনারা এখন নতুন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছেন। সামনে আপনাদের উজ্জল ভবিষ্যত। আপনাদের এই পর্যায়ে আসার জন্য এদেশের জনগণের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তাই আপনাদেরও তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ইমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিবেশ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে না এমন দাবি করি না। শিক্ষকদের পাঠদানে অবহেলা, যথাসময়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে না পারা কিংবা পক্ষপাতমূলক ও অবাঞ্ছিত আচরণের অভিযোগ শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি প্রতিবেদন ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও ছাত্রদের দলীয় রাজনীতির অকল্যাণকর প্রভাব, সেশনজট সংস্কৃতির কারণে শিক্ষা জগতে নৈরাজ্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজে ও চিন্তায় স্বচ্ছতায় ও জবাবদিহিতার অভাব উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের বাধা বলে চিহ্নিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু উচ্চশিক্ষার মানের অবনতি হয়নি, পরীক্ষা পদ্ধতিও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অবস্থা এমন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক অন্যের মূল্যায়নের উপর আস্থা রাখতে চায় না।’
এর আগে দুপুর সাড়ে তিনটায় রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। এ সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতি দুটি আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
পরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দুই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক ড. চৌধূরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল বারী। পরে সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
বিবার্তা/পাভেল/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]