শিরোনাম
জবিতে ডিজিটাল ক্লাসরুমের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৪০
জবিতে ডিজিটাল ক্লাসরুমের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অ্যাকাডেমিক ক্লাসে শিক্ষকদেরকে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে কোনো ক্লাস নিতে পারবেন না। কোর্সের প্রয়োজনে কোনো ভিডিও অথবা সচিত্র কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের দেখানোর প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া প্রতিটি কোর্সের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা সুলভ মূল্যে বাজারে পাওয়া যায় এমন একটি বিশ্বমানের টেক্সট বই নির্ধারণ করে দেবেন। প্রয়োজনে একাধিক রেফারেন্স বই ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো অবস্থাতেই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নোট, গাইড বা লেকচার শিট দিতে পারবেন না।


শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া বন্ধ করায় বুঝতে ও দেখতে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ক্লাসের আকার বড় ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় পেছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা শুনতে পাননা। ক্লাসে টিচার হোয়াইট বোর্ডে লিখলেও দূর থেকে তা বোঝা যায় না। প্রতিটি বিষয়ের জন্য সুলভ মূল্যে বাজারে পাওয়া যায় এমন বিশ্বমানের টেক্সট বই নির্ধারণ করে দেবার কথা থাকলেও সেটা বাস্তবায়িত হয়নি।


অন্যদিকে লাইব্রেরি ও সেমিনারে পর্যাপ্ত বই না থাকায় আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেমিনারে বই থাকলেও একটি লেখকের একের অধিক বই থাকে না। বই সাজেষ্ট করলেও বই পাওয়া যায় না। বই পাওয়া গেলেও প্রয়োজনের সময় ১/২ টি বই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবার সাজেস্ট করা বই বাইরে সহজলভ্য নয়। সেমিনার থেকে বই বাইরে নেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ থাকায় আরো সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়ার সময় শিক্ষকরা কোনো পরিশ্রম ছাড়াই অন্যের স্লাইড বা ইন্টারনেট থেকে স্লাইড ডাউনলোড করে নিজের বলে চালিয়ে দেন। হুবহু ওই স্লাইড ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। সিলেবাসের সাথে ওই স্লাইডের টপিক্সের কোনো মিল থাকে না। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অমনযোগী হয়ে পড়েন। তারা জানেন, বাসায় গিয়ে হুবহু ওই স্লাইড ডাউনলোড করা যাবে। শিক্ষকরা যেন ক্লাসে নিজে বানানো লেকচার শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে পারেন ও বুঝাতে পারেন এ জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


জবি শিক্ষার্থীরা জানান, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া বন্ধ হওয়ায় আগের তুলনায় এখন সময় নষ্ট হচ্ছে বেশি। পরিশ্রম ও কষ্টও বেড়েছে। গতানুগতিক ধারায় লেকচার না দিয়ে প্রাকটিক্যালি ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হয়। ক্লাসের সময় প্রয়োজনীয় বই সাজেস্ট করলে সুবিধা হয়। যেখানে দেশ আস্তে আস্তে ডিজিটাল হচ্ছে, সেখানে ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা ডিজিটাল বাংলাদেশের সম্পূর্ণ বিপরীত বলেও মন্তব্য করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।


সমাজকর্ম বিভাগের আরিয়ান হাসান বলেন, জগন্নাথে সমস্যার শেষ কোথায়? একটার পরে একটা সমস্যা লেগেই আছে। সমস্যা তো শিক্ষকদে নয়, সমস্যা শিক্ষার্থীদের। মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দেয়ার সময় বলা হয়েছিল সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় এমন বই নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এটা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা সন্দেহ আছে।


এ বিষয়ে লাইফ অ্যান্ড আর্থ অনুষদের ডিন কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, শিক্ষদের জন্য এই নিয়ম করা হয়েছে। শিক্ষকরা যেন বাসায় বই পড়ে এসে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পড়ান। শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারেন।


তিনি আরো বলেন, যদি শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হয় তাহলে তারা লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। আমরা আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবো।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক শিক্ষক আছেন, যারা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার সময় লাইন টু লাইন শুধু পড়িয়ে যান, কিছু বোঝান না। শিক্ষকদের একটা ইথিক্স থাকা দরকার। শিক্ষকরা যেন শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বোঝাতে পারেন এ জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


টেক্সবুক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছর বই কেনার জন্য প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি টেক্সবুকের সমস্যার সমাধান হবে।


বিবার্তা/আদনান/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com