পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি); দেশের একমাত্র অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির নেই কোনো হল সুবিধা বা সুপরিসর ক্যাম্পাস। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে মেস অথবা ভাড়া বাসায় থাকতে হয়।
প্রতি্ঠিানটি দীর্ঘদিন ধরে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধুপখোলার ৭ একরের মাঠটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যাবহার করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিভাগ ফুটবল, ক্রিকেট প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠে।
প্রায় ৭ একর আয়তনের ধূপখোলা মাঠটি বর্তমানে খেলাধুলার অনুপযোগী। মাঠটি তিনভাগে বিভক্ত- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ। এই তিনটি মাঠের মালিকই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
সম্প্রতি পুরান ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী ধূপখোলা মাঠে ‘বাণিজ্যিক শিশুপার্ক’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলার অনুপযোগী মাঠটি ঘসামাজা সংস্কার না করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, গত মার্চে ডিএসসিসির অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে ধূপখোলা মাঠে একটি আধুনিক শিশুপার্ক নির্মাণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে নকশা প্রণয়নের জন্য ‘প্রকল্প উপদেষ্টা’ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
সুত্র জানায়, প্রস্তাবিত এ শিশুপার্কে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ১০টি রাইড, যা এখন পর্যন্ত দেশের কোনো সরকারি বা বেসরকারি পার্কে ব্যাবহার করা হয়নি। এতে খরচ হবে ১৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া অফিস, গেট, দেয়াল তৈরি করতে খরচ হবে আরো ৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তবে পরিবেশবাদীরা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন। তারা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকায় বাণিজ্যিক পার্কের চেয়ে উন্মুক্ত সবুজ পরিবেশ ও খেলার মাঠ বেশি জরুরি। মাঠটিতে ইটকাঠে গড়া শিশুপার্ক করে তা বাণিজ্যিকীকরণ না করে বরং তা সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ, পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং ক্রীড়া সংগঠকেরা।
তারা বলেন, এই মাঠে বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণ করা হলে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হবে এলাকার শিশু-কিশোর ও যুবকেরা। এছাড়া আবাসিক এই এলাকায় সরু সড়কে যানজট বেড়ে যাবে। ডিএসসিসিকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, শিশুপার্ক খেলার মাঠের বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে না। শিশু-কিশোরদের শারীরিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ খুব জরুরি। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার জন্য খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত পরিবেশ দরকার। শিশুদের আনন্দ বিনোদনের জন্য অন্যত্র শিশুপার্ক নির্মাণ করা যেতে পারে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, চারপাশে গাছগাছালি ঘেরা ধূপখোলা মাঠের তিনটিতেই পৃথক দলে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলছে প্রায় দুই শতাধিক শিশু-কিশোর। তবে দুটি মাঠই বড় বড় গর্ত ও ইটপাথরে ভরা। বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ। স্থানীয় অনেককে ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের দক্ষিণ পাশে গাছের নিচে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে।
ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের মাঠে বিনামূল্যে নিয়মিত খুদে ফুটবল খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেয় গেন্ডারিয়া সোনালি অতীত ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সংস্থা।
এই সংস্থার সংগঠক ও কোচ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্রিকেট ও ফুটবলের জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলোয়াড় এই মাঠে খেলাধুলা করেছেন। বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোররাও সেখানে নিয়মিত খেলাধুলা করে। এই মাঠে বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণ করলে পুরান ঢাকার পরিবেশ আরো খারাপ হবে। উন্মুক্ত স্থান বলতে কিছুই থাকবে না।
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ওই প্রকল্প পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, শিশুপার্কে কী কী রাইড থাকবে, তার নকশা করছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তা বাস্তবায়নের পর প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ডিএসসিসির মোট ১৬টি খেলার মাঠ ছিল। এর মধ্যে বর্তমানে সাতটিই বেদখলে আছে। আর দখলে থাকা মাঠগুলোর অধিকাংশই খেলাধুলার অনুপযোগী।
বিবার্তা/আদনান/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]