ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সহপাঠীর হাত ধরার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন থেকে হামলার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। আমরা ভিসি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবেন। আমরা তার প্রমাণ দেখতে চাই।
কোন কর্তৃত্ববলে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী আরেকজন শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র দেখতে চায়? এই সাহস তাদের কে দিল? সেই প্রশ্নও রাখেন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বর্বরোচিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশকিছু দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হলো-
১। নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারী চিহ্নিত দোষী-
ক) সিফাত উল্লাহ (উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ)
খ) মাহমুদ অর্পণ (আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট বিভাগ)
গ) মোল্লা মোহাম্মদ আলে ইমরান পলাশকে (শিক্ষা ও গবেষণা
ইনস্টিটিউট) অবিলম্বে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে।
২। জড়িত বাকি নির্যাতনকারীদেরকে হল গেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিতকরণ ও উপযুক্ত শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৩। আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
এই বিবেচনায়, অর্থনীতি বিভাগের সব শিক্ষার্থী দ্রুত তদন্ত শেষে এই হামলাকারীদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানান এবং এই দাবিতে তারা ৭২ ঘণ্টার জন্য ক্লাস বর্জন ঘোষণা করে।
হামলাকারী তিনজনকে রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ কথা সবাই অবগত যে, সাময়িক বহিষ্কারের মেয়াদ খুবই সামান্য এবং এই সামান্য শাস্তির মাধ্যমে সুবিচার নিশ্চিত হয় না। বহিষ্কারের মেয়াদ শেষে এরকম হিংস্র, দুর্বৃত্তদের ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তন ঘটলে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়বে। তাই আমরা স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই, বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও রোকেয়া গাজী লিনা কার্জন হলে যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন। এসময় হঠাৎ করেই কয়েকজন তাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায় এবং তাদের আইডি কার্ড দেখতে চায়। শিক্ষার্থী দুইজন তাদের আইডি কার্ড দেখায় এবং তারা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দেয়। পথরোধকারীরা নিজেদের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে দাবি করে এবং শিক্ষার্থী দুইজনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এসময় তারা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে মারধর করা শুরু করে।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে রক্ষা করতে রোকেয়া গাজী লিনা এগিয়ে গেলে তার ওপরেও এই দুর্বৃত্তরা চড়াও হয় এবং তাকে লাঞ্ছিত করে। পরবর্তীতে হামলাকারীরা সূর্যসেন হলের দিকে এগোলে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তাদের নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে এবং তাদের ওপর হামলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা হলের ভেতর থেকে লাঠি, স্টাম্প নিয়ে এসে পুনরায় তাদের ওপর হামলা করে।
হামলায় মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং রোকেয়া গাজী লিনা দুইজনেই আহত হন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
বিবার্তা/রাসেল/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]