শিরোনাম
‘অভাবের সংসারে চিকিৎসার পয়সা ছিল না’
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৮
‘অভাবের সংসারে চিকিৎসার পয়সা ছিল না’
আশিকুর রহমান লাভলু, ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘আমি কেমন করে পত্র লিখিরে বন্ধু, গ্রাম পোস্ট অফিস নাই জানা…' স্বকন্ঠে গাওয়া গানের মতো জীবনে কখনো পত্র লেখার সৌভাগ্য হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর হোসেনের।

 

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৪টা। ঢাবির মলচত্বরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মীর হোসেন ও তার বন্ধুর গলা ছেড়ে গাওয়া গান রাতের নিস্তব্ধতায় কানে আসতেছিল। ভিসি চত্বর থেকে গানের শব্দ শুনে কাছে যেতেই টের পেয়ে থমকে দাঁড়ান। সৃষ্টিকর্তা দৃষ্টি না দিলেও দিয়েছেন অসাধারণ অনুভূতি শক্তি মীর হোসেনকে।

 

সাংবাদিক পরিচয় দিতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে জানালেন রাতে ঘুম না আসায় দুই বন্ধু হেঁটে হেঁটে গান গাচ্ছিলেন। জীবনের সুখ দুঃখের নানা গল্প বললেন বিবার্তা এই প্রতিবেদককে।

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মীর হোসেনের গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। ছোটবেলায় পৃথিবীর আলোবাতাস দেখতে পেলেও অল্প কয়েকদিনেই হারাতে হয় দুই চোখ। অভাবের সংসারে চিকিৎসার পয়সা জোগাড় করতে না পারায় আস্তে আস্তে চোখের আলো নিভে যায় তার।

 

প্রচণ্ড মেধাবী ও পরিশ্রমী মীর হোসেন হাল ছাড়ার পাত্র নয়। ব্যক্তি জীবনে নানা দুঃখ আসলেও কোনো কিছুই থামিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। ভর্তি হলেন গ্রামের স্কুলে। অন্যের শব্দ করে পড়া মুখস্থ করে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হলেও পরে চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

 

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। অনার্স শেষ করেছেন ২০১৫ সালে। মাস্টার্সে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থী থাকেন সূর্যেসেন হলের ২১০ নম্বর রুমে। 

 

জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে নানা ঝামেলার কথা। পরীক্ষার সময় লিখে দেয়ার জন্য কাউকে না পেলে পোহাতে হয় ভোগান্তি। এদিকে অন্যের শব্দ করে পড়া মোবাইলে রেকর্ডিং করে রাখেন। এভাবেই চলে তার শিক্ষাগ্রহণ।

 

তিনি বলেন, ‘আমার চোখের আলো নেই কিন্তু তারপরেও বন্ধুদের সহযোগিতায় আমি সবকিছু দেখতে পাই বলে আমার ধারণা।’

 

ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চান মীর হোসেন। কিছু করে অভাবের সংসারে হাল ধরতে চাইছেন। তবে চাকরিক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় কিছুটা চিন্তায় আছেন বলে জানান তিনি।

 

গল্প শেষ আবার ধরলেন গানের বাকি অংশ- ‘বন্ধুরে হইতা যদি দেশের দেশী, ওই চরণে হইতাম দাসীরে...।’ এভাবেই গান গাইতে গাইতে চললেন সূর্যসেন  হলের দিকে।

 

বিবার্তা/লাভলু/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com