শিরোনাম
শহীদ জোহা দিবস আজ
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:৪০
শহীদ জোহা দিবস আজ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৪৪ ধারা ভেঙে সকালে রাস্তায় নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তখন প্রধান ফটকের কাছাকাছি এলে ধীরে ধীরে আন্দোলন বড় হতে থাকে।


এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পাকিস্তানি সেনারা মিছিলে গুলি করতে উদ্ধত হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ছাত্রদের সামনে দাঁড়ান।



‘ডোন্ট ফায়ার, আই সেইড ডোন্ট ফায়ার! কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার বুকে গুলি লাগে।’ ছাত্রদের বাঁচাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এভাবে চিৎকার করেছিলেন ড. শামসুজ্জোহা।


এক পর্যায়ে ড. জোহা ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে পরে রাজশাহী মিউনিসিপল অফিসে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।


ড. জোহার রক্ত ঝরার মধ্য দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। পতন ঘটেছিল সামারিক জান্তা আইয়ুব খানের। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভীতও রচিত হয়েছিল ড. জোহার আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ড. জোহাকে।


এরপর থেকে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনটিকে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে ড. জোহার শাহাদতের দিনটিকে দীর্ঘদিন ধরে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ৪৮ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দিবসটি শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয় ‘জোহা দিবস’ হিসেবে। এদিন ক্যাম্পাসে ‘শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন।


রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ৪৯ বছরেও দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস করা সম্ভব হয়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা এখন সময়ের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজও ঘোষণা আসেনি


তবে শুধু দিনটি আসলেই শোকর্যালি ও মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়। আদৌ সরকারি কোনো পক্ষের কাছে সরাসরি দাবি জানানো হয়েছে কিনা-সে বিষয়ে সন্দিহান এই শিক্ষক নেতা।


এদিকে ড. জোহার স্মৃতি রক্ষার্থে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চার টাকা মূল্যের ডাকটিকেট চালু করা হয়। রাবি ক্যাম্পাসে একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় তার নামে। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সামনে রয়েছে স্মৃতি ভাস্কর্য স্ফুলিঙ্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রশাসানিক ভবনের সামনে চোখে পড়বে জোহার সমাধি। সেখানে জোহা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা করা হয়েছে। যা ‘জোহা চত্বর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।


ড. শামসুজ্জোহার সংক্ষিপ্ত জীবনী


১৯৩৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ড. শামসুজ্জোহা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৪৮ সালে বাকুড়া জেলা স্কুল থেকে ১ম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে ক্রিশ্চান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে স্নাতক ও ১৯৫৪ সালে স্নাকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অর্ডিন্যান্স কারখানায় শিক্ষানবিশ সহকারী কারখানা পরিচালক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন।


১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। শহীদ হওয়ার সময় তিনি স্ত্রী নিলুফা জোহা ও এক কন্যা সন্তান রেখে যান। দীর্ঘদিন ধরে তারা আমেরিকা বসবাস করছেন। এখন তারা সেখানকার নাগরিক হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।


৪৯তম শাহাদত বার্ষিকীর কর্মসূচি


এদিকে দিবসটি উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা, প্রদীপ প্রজ্জ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে- সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, পৌনে ৭টায় ড. জোহার মাজার ও তার স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ৮টায় অফিসার সমিতি কার্যালয়ে আলোচনা সভা। বাদ জোহর কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি ও মোনাজাত, শামসুজ্জোহা হলে সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করা হবে। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এছাড়া আগামী ২৭ ফেব্র্বয়ারি রাবির সিনেট ভবনে ‘ড. জোহা স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠিত হতে হবে। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com