ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টরের পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং ছাত্রী নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতা-নেত্রীদের আজীবন বহিষ্কারের দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেছে ঢাবির বাম ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে উপাচার্য কার্যালয়ের অন্তত তিনটি ফটক ভেঙে বেলা দেড়টার দিকে উপাচার্যের দরজার সামনের করিডোরে অবস্থান নেন তারা।
গত সপ্তাহ থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করে। পরে মিছিলটি টিএসসি, কলাভবন, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ঘুরে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আসে।
সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকা শিক্ষার্থীরা এক সময় উপাচার্য কার্যালয়ের প্রধান ফটক ধরে ধাক্কা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ে প্রধান ফটকের দুটি তালা ভেঙে কার্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে যায় তারা।
বেলা ১টার দিকে উপাচার্য কার্যালয় ভবনের কলাপসিবল গেটও ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা দেড়টার দিকে ভবনের ভেতরের আরেকটি গেট ভেঙে উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন তারা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে ঘেরাও করে রাখা শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বিবার্তাকে জানিয়েছেন। এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান তার কার্যালয়েই না থাকায় শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করছেন। আর উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে গিয়ে এই সমাধান করতে বলেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে ১৫ জানুয়ারির আন্দোলন কর্মসূচিতে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের ‘নিপীড়নের’ প্রতিবাদে আন্দোলনের সামনে আসে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীরা।
নিপীড়নে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারের দাবিতে ১৭ জানুয়ারি প্রক্টর কার্যালয়ও ঘেরাও করে তারা। এছাড়া ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ‘হামলার’ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
তবে প্রক্টর কার্যালয় ঘেরাওয়ের সময় ফটক ভাংচুরের ঘটনায় পরদিন ১৮ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে প্রশাসন। এর প্রতিবাদে ওইদিন মধ্যরাতে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শুভ বলেন, মামলা যদি করতেই হয় তাহলে অজ্ঞাতনামা কেন? আমরা তো আন্দোলনে আছি। আমাদের গ্রেফতার করুন। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ওই মামলা প্রত্যাহারসহ সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি সমস্যাও সুষ্ঠু সমাধান দাবি করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর তাতে সাক্ষ্য দিতে তিন শিক্ষার্থীকে ডেকেছিল, কিন্তু তারা আসেনি।
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের রিপোর্ট পেলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রক্টরের এ বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা ক্ষেপে যায়। তারা সাথে সাথে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাবি ভিসির কার্যালয়ে প্রক্টর অবরুদ্ধ আছেন। আর আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান করছেন।
বিবার্তা/রাসেল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]