শিরোনাম
এক যুগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫৫
এক যুগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সৌখিন আদনান, জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে একযুগ পূর্তি হলো পুরন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টি ১২বছর পূর্ণ হলেও ১৫৯ বছর আগে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।


গৌরব, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ষাট ও সত্তরের দশকে ‘জগা বাবুর পাঠশালা’ নামে খ্যাত হলেও আজকের এই দিনে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ দেয়া হয়।


২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’-এ উন্নীত হয়।


অনাবাসিক হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত মেধা মননে তাদের অবস্থান প্রমাণ করে এসেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের সোনার হরিণ ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২য় অবস্থান অর্জন করে এবং ৩৬তম বিসিএসেও ব্যাপক সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির গৌরবকে শানিত করেছে।


এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৭/৪ ধারাও (নিজস্ব আয় বাড়ানো) বাতিল করতে বাধ্য হয় সরকার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়টি সকল সংকট কাটিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ দান করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরল ইসলাম নাহিদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বাধুনিক ও বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে ২শ’ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে সরকার। জেলা প্রশাসকের সহায়তায় এই জমি অধিগ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


এদিকে, নানা সঙ্কটের মধ্যেই মাথা চাড়া দিতে শুরু করেছে জবির একমাত্র নির্মাণাধীন আবাসিক ‘বঙ্গমাত বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল’। ২০তলা ভিত্তির উপর ১৬তলার এই হলটি ইতোমধ্যে ১০ম তলার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ২০১৮ সালের শেষের দিকে হলটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করবে।


সেই সাথে ২০তলা ভিত্তির উপর ১৩ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের (বিজনেজ স্টাডিজ ভবন) উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারণ শেষের দিকে। চলছে ১৩ তলা থেকে আরো উপরে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা। এ নিয়ে বুয়েটের কাছে এপ্রোভ এর জন্য আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদফতর।


বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চ সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রশংসা করে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নিরবে শিক্ষাকেন্দ্রিক বিপ্লব ঘটাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী কযেক বছর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আরো গর্ব করার মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুপ নেবে।


শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষায় সামগ্রীক ভাবে ২য় অবস্থান অর্জন করার ব্যপারে বিশ্ববিদ্যায়লটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অপার সম্ভাবনাময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পুরান ঢাকার মূল সংস্কৃতিক বলয় এ পরিণত হবে।


সম্ভাবনাময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পরিতাপের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে যে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এক যুগ পুর্তি হলেও এখন পর্যন্ত একটি সমাবর্তনও পাননি তারা।


ইতিহাস


আরমানিটোলায় ব্রাহ্ম সমাজের নিজস্ব প্রাঙ্গণে ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্ম ধমের্র মূল মতবাদ সম্পর্কে সাধারণ ছাত্রদের জানানোর জন্য চালু হয় অবৈতনিক ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল। পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সঙ্কটে পরে। যার কারণে মালিকানা পরিবর্তন করে ব্রাহ্ম স্কুলের ভার ১৮৭২ সালে তুলে দেয়া হয় বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর হাতে। কিশোরীলাল জমিদারের বাবার নামে এর নতুন নাম হয় ‘জগন্নাথ স্কুল’।


এরপর ১৮৮৪ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে উন্নীত হয়। ১৯২০ সালে ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ‘জগন্নাথ কলেজ আইন’ পাস করে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ কলেজে স্নাতক শিক্ষা বন্ধ করে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত শিক্ষা সীমিত করা হয়।


১৯৪২ সালে মেয়েরাও জগন্নাথ কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। পরে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ দিতে জগন্নাথ কলেজে প্রথম নৈশকালীন পাঠদান শুরু হয়।


১৯৬৮ সালে জগন্নাথকে সরকারি করা হয়, ১৯৬৯ এর গণঅভুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১ দফায় এর বিরোধিতা করলে ওই বছরই কলেজটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জগন্নাথ কলেজকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উন্নীত করা হয়।


১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে পুরান ঢাকার বেশকিছু পরিত্যক্ত হিন্দু বাড়িকে জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা হল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু আশির দশকের পরে সেগুলো হাতছাড়া হয়ে যায়। বেদখল হয়ে যাওয়া হল পুনরুদ্ধারের দাবিতে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করে জগন্নাথ বিম্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় দুটি হল দখলমুক্ত হলেও তা এখন পর্যন্ত তা ব্যবহার উপযোগী হয়নি।


অবদান


ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক ক্ষমতাসীনদের রোষের শিকার হন। ভাষা শহীদ রফিক এ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষানীতি বাতিল আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে জগন্নাথের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।



মুক্তিযুদ্ধের সময় এ কলেজকে ‘ক্যাম্প’ হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানি বাহিনী। স্বাধীনতার পরে কলেজের ছাত্র সংসদ ভবনের কাছে গণকবরেরও সন্ধান পাওয়া যায়। কথিত আছে, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সাবেক জগন্নাথ কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ অনেকেই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি থেকে অসংখ্য বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়েছিল।


একযুগ পূর্তিতে আয়োজন


শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টি এক যুগে পূর্তি হলেও এর উদযাপন পিছিয়ে করা হয়েছে ২২ অক্টোবর (রবিবার)। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভাবে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় জবির যুগপুর্তি অনুষ্ঠান পিছানো হয়েছে।


রবিবার (২২অক্টোবর) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সেই সঙ্গে বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।


সকাল সাড়ে ৯টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুসজ্জিত শোভাযাত্রাটি উপাচার্যের নেতৃত্বে শহীদ মিনার চত্বর হতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রায় সাহেব বাজার মোড় ঘুরে ভিক্টোরিয়া পার্ক পরিভ্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শেষ হবে।


এরপর বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সংগীতানুষ্ঠান, বেলা ১২টায় আলোচনা সভা এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নাট্যকলা বিভাগের উদ্যোগে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিজ্ঞান ভবন চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে।


এছাড়াও সেদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশের সুনামধন্য কন্ঠ শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের ব্যান্ডদল ‘দলছুট’ নিয়ে জমজমাট কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।


এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজন কমিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগত ১০০০ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য ত্রাণ সামগ্রী গত ৮ অক্টোবর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার হাতে তুলে দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।


বিবার্তা/আদনান/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com