দিনে মাত্র ৭ টাকা। ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শুরু করেছিলেন মসের উদ্দিন। মাস্টার রোলে ৮ থেকে ৯ টাকা, ৯ থেকে ১০টাকা এভাবে বাড়তে শুরু করে তার মজুরী। এখন সেই মাস্টার রোলেও দেয়া হয়না মজুরি। প্রথমে যে মাস্টার রোলে তাদেরকে মজুরী দেয়া হতো সে মাস্টার রোল উঠিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘ ৪১ বছরেও সেই আশ্বাস বাস্তবে রুপ নেইনি। কৃষি প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের থেকে চাকরিটা স্থায়ী হওয়ারও আশ্বাস পেয়েছিলেন।
মসেরের সাথে আরেক সহযোগী জয়নাল আবেদিনও কাজ শুরু করেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তবুও কাজ করতে হয়। একদিন কাজে আসতে না পারলে ধার-দেনা করে চলতে হয় তার। বলছিলেন, মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে কাজে আসতে পারেন না।
তিনি বলেন, দিনে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করে দিনশেষে আমাদেরকে মাত্র ২৩০ টাকা দেয়া হয়। পরিবারে সদস্যও চার জন। আগে এই সামান্য টাকাতেই চলতো, তবে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মাঝে মাঝেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যায়।
শুধু মসের উদ্দিন আর জয়নাল আবেদিন নয় খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কৃষি প্রকল্পে এরকম আরো ২৪ জন দিন মজুর আছেন। কেউ ৪০, কেউ ৩৫, কেউ বা ২০ বছর ধরে কাজ করছেন এখানে। দীর্ঘসময় ধরে কাজ করলেও ভাগ্যের উন্নতি হয়নি তাদের। এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি প্রকল্প সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী আছেন। মাস্টার রোলে চাকুরি করেন তারা। মাস্টাররোল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনির কর্মচারীদের দিনে ৮ ঘণ্টায় ৫০০ টাকা এবং চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারীদের দিনে ৪৫০ টাকা ধার্য আছে। তবে অন্য শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টায় নির্ধারিত টাকা দেয়া হলেও কৃষি প্রকল্পের শ্রমিকদের সেটা দেয়া হয় না। শুধু দিন মজুরী কম নয়।
সোমাবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এ উপলক্ষে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই বিশেষ দিনে তাদের জন্য নেই কোনো ছুটি বরাদ্দ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শ্রমিকদের মতো সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন তারা। হযরত আলী নামে এক শ্রমিক বলেন, কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে বা আহত হলে নিজের টাকা দিয়ে ঔষুধ কিনতে হয়। অসুস্থ হয়ে একদিন না আসতে পারলে চাকরি চলে যাওয়ার ভয়। কোনো ধরনের নিশ্চয়তা নেই চাকরির। কোনো কোনো দিন কাজে না আসলে কয়েকদিনের জন্য কাজ থেকে বাইরে থাকতে বলা হয়।
শ্রমিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি প্রকল্প উপ রেজিস্ট্রার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বদ্ধভূমির আশেপাশের জমিগুলো চাষাবাদের জন্য এই কর্মচারীরা আছেন। তবে তারা নিয়োগ প্রাপ্ত নন। কৃষি প্রকল্পের আওতায় কর্মচারীরা দিনমজুর হিসেবে টাকা পান। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রথম শিফটে ১৬০ টাকা এবং বিকেল ৩ টা থেকে ৬টা (কোনো কোনো সময় রাত ১০টা) মাত্র ৭০ টাকা দেয়া হয়।শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির কথা জানাতে চাইলে তিনি বলেন, এছাড়া এই প্রকল্পের চেয়ারম্যান থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন প্রশাসনিক দায়িত্বে কেউ না থাকায় তাদের ব্যাপারে কোনো কিছু উত্থাপন করা যাচ্ছে না।
প্রশাসন আসলে কৃষি প্রকল্পের সভায় শ্রমিকদের দাবি নিয়ে তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হবে। সেখান থেকে একটা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, অন্য শ্রমিকদের মতো মজুরী পাওয়ার দাবি নিয়ে এবছরের গত ১৪ই মার্চ কর্মবিরতিতে যান তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে তৃতীয় শ্রেনি বা চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি ও সকল সুযোগ সুবিধা দিবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
বিবার্তা/নাঈম/আকবর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]