
দিনটা ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫, বিকেল ৪টা বেজে ২০ মিনিট। এমুহূর্তে বাস শিডিউলে শিক্ষার্থীদের জন্য শহর থেকে ক্যাম্পাসমুখী কোন বাস নেই। টিউশন শেষে কুমিল্লা শহরের পুলিশ লাইন'সে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ চোখে পড়ল ক্যাম্পাসমুখী একটি স্টাফ বাস আসছে। দৌড়ে গিয়ে যখনই উঠতে যাব, বাসে পা-রাখার মতোও বিন্দু পরিমাণ জায়গা নেই। বাসের কানায় কানায় শিক্ষার্থীতে ভরপুর। তবোও একপা উঠিয়ে কোনোরকম বাসে ঝুলে রইলাম। আমি উঠার পর শাসনগাছা, আলেখাড়চর বিশ্বরোড, কোটবাড়ি বিশ্বরোডে দাঁড়িয়ে থাকা আরো অন্তত ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীর অসহায় দৃষ্টিতে বাসের চলে যাওয়া দেখা ছাড়া বিকল্প আর কোন উপায় ছিল না।
এমন চিত্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে। পরিবহণ সংকটে হরহামেশাই এমন ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরেও পরিবহণ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের সংখ্যা। প্রতি ৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য বাসের সিট ১টি আর ৩৭১ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশাসনের বরাদ্দ বাসের সংখ্যা ১ টি। প্রতিদিনই আসনের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নিয়ে বাস চলাচলে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে এবং দরজার সামনে ঝুলে যাতায়াত করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং পরিবহণ পুলের তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৫৯৩৪ জন। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ থাকা নিজস্ব বাস ৮ টি এবং ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির বাস ৮টি মিলে মোট ১৬টি বাসের সিট সংখ্যা প্রায় ৭৫০টি। মোট শিক্ষার্থী ও বাস সংখ্যার হিসেবমতে, ৩৭১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১টি বাস এবং ৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিট বরাদ্দ রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন শিডিউলে বিআরটিসির ভাড়ায় চালিত লাল বাসগুলোর বেশিরভাগেরই ফিটনেস নেই। প্রায়ই যাত্রার মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায় এই বাসগুলো, ফলে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাতে হয়। এছাড়া এই বাসগুলোর পাখা নষ্ট, বৃষ্টির দিনে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে ইত্যাদি নানান সমস্যায় জর্জরিত এই লাল বাসগুলো।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকতার চরম সংকটে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে থাকতে হয় শহরের মেস কিংবা বাসা বাড়িতে। এদিকে বাস সংকটের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া কিংবা শহরে টিউশন; বাসে জায়গা না পাওয়ায় অনেককেই অটোরিকশা কিংবা সিএনজির উপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে প্রায়শই ভাড়া বেশির পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী আফরিন উল আলম রিমু বলেন, প্রতিদিনই যতজন শিক্ষার্থী বাসে বসে যাওয়ার সুযোগ পায় তার চেয়ে অধিক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। অবস্থাটা এমন হয় যে বাসে তিল ধারণের জায়গাটুকুও থাকে না। এতে করে বসে যাওয়া এবং দাঁড়িয়ে যাওয়া উভয় পক্ষকে পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। তাছাড়াও অধিক জনাকীর্ণ বাসে দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে অধিক। তাই, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা নামধারী না হয়ে স্বস্তিকর হোক।
একই বর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিয়া বলেন, কুবি শিক্ষার্থীদের বাস সংকট যেন এখন সকল ভোগান্তির কারণ হয়েছে। প্রশাসন তাদের মন মতো সব করছে, অথচ শিক্ষার্থীদের সমস্যা তারা কর্ণপাত করছে না। বাসে আসা-যাওয়ার সময় দাঁড়ানোর জায়গাটা পর্যন্ত থাকে না। বারংবার বাস সংকট সম্পর্কে প্রশাসন ও ভিসি স্যার বরাবর জানানোর পরও তারা বিষয়টা অবহেলা করছে। অতিদ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ না করতে পারলে, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না করতে পারলে এই প্রশাসন ব্যার্থ বলে গণ্য করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ পুলের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা আছে। যেহেতু শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি আর বাস সংখ্যা অনেক কম, এটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয়। এই বিষয়টা আমরা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করব। যদি সম্ভব হয়, বাজেটে বরাদ্দ থাকে, তাহলে নতুন গাড়ি কেনা হবে। বাসের ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আমরা সুপারিশ করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমরা আস্তে আস্তে লাল বাসের সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছি। সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে নিজস্ব বাসের পরিবর্তে ভাড়ায় বাসের সংখ্যা বাড়ানোর সংখ্যা। আমরা নীল বাস (নিজস্ব বাস) বাড়ানোর চেয়ে ভালো লাল বাসের ব্যবস্থা করতে পারি। এছাড়া নীল বাসের চেয়ে লাল বাসের প্রতি সরকার থেকে বরাদ্দও বেশি।
বিবার্তা/প্রসেনজিত/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]