
দুই হাতে আঙুল নেই, কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে স্বপ্নকে জিতিয়ে নিয়েছে কুড়িগ্রামের মেয়ে মিনারা খাতুন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলেও অর্থাভাবের কারণে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তিনি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তার ভর্তি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ রাউফুল আজম খান।
রবিবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলীর নজরে এ বিষয়টি এলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেন।
উপাচার্য বলেন, “খবরটি পাওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। অবশেষে আজ সে আমাদের বিভাগের অংশ হতে পেরেছে।”
মিনারা জন্মগতভাবে দুই হাতে আঙুলবিহীন হলেও কবজির সাহায্যে লেখার দক্ষতা অর্জন করে একের পর এক পরীক্ষায় সফলতার প্রমাণ রেখেছেন।
তিনি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার দিনমজুর রফিকুল ইসলাম ও প্রয়াত মর্জিনা বেগমের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে ছোট মিনারা জীবনসংগ্রামে কখনো হার মানেননি।
প্রাথমিক থেকে শুরু করে পিইসি, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ২০২২ সালে সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তি হলেও উচ্চশিক্ষার জন্য দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। অবশেষে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে বেরোবিতে ভর্তির সুযোগ পান।
মিনারার পরিবারের জীবন কখনোই সহজ ছিল না। তার মা মারা যাওয়ার পর বাবা রফিকুল ইসলাম আবার বিয়ে করেন। দিনমজুর রফিকুলের জীবনে অভাব নিত্যসঙ্গী। নদীভাঙনে সাতবার বাড়ি হারিয়ে শেষমেশ পাউবো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু সেখান থেকেও উচ্ছেদ হতে হয়। এত কষ্টের মাঝেও বাবার উৎসাহ এবং নিজের অদম্য মনোবল নিয়ে মিনারা চালিয়ে যাচ্ছেন লেখাপড়া।
এই অসাধারণ মেয়ে প্রমাণ করেছে, শারীরিক সীমাবদ্ধতা কোনো বাধা নয়। কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে মিনারা। তার গল্প এখন অন্যদের জন্য হয়ে উঠেছে সাহস ও প্রেরণার উৎস।
বিবার্তা/সোলাইমান/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]