জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন।

৩ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, ৯ দফার উপর ভিত্তি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। ৫ই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, যে ৯ দফার উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে সে ৯ দফার অন্তর্ভুক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিগুলোতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক প্রকার নিশ্চুপ রয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে একটি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের মত ভূমিকা পালন করছে। তদুপরি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে এই ব্যানার এখনও বজায় থাকা আন্দোলনে সর্ব পেশার, সর্বস্তরের এবং সর্বদলের মানুষের অংশ গ্রহণের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে।

এছাড়াও সমন্বয়করা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উক্ত বিষয়গুলোতে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করে দিতে হবে। এর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি-র কতিপয় সমন্বয়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে অক্ষমতা, সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শামীম মোল্লার গণধোলাই ও পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে সমন্বয়ক কমিটির একাধিক সমন্বয়কের নাম উঠে আসলেও সে ব্যাপারে ব্যানার কোন ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে না পারায় আমরা সমন্বয়ক পর্ষদের ১৭ জন পদত্যাগ করছি।

পদত্যাগকৃত সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের তালিকা- আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক, ঐন্দ্রিলা মজুমদার, জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি, সাইদুল ইসলাম

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, মূলত আমাদের পদত্যাগ করার কারণ ২টি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি-র কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারি দলের মত আচরণ ও গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিট বিরুদ্ধ কাজ।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, ৫ই আগস্টের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সর্বস্তরের, সর্বপেশার ও সর্বমতের। কোন একজন বা দুইজন কিংবা কোন একটি মত এই আন্দোলনের একক কৃতিত্বের দাবিদার নয়। একই সাথে সহস্রাধিক শহীদ ও আহতদের রক্ত ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিসর্জনের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ শুধু একটি গোষ্ঠীর নয় বরং সকলের। গণমানুষের মেহনত, ঘাম, ও রক্তের ফসল এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে এবং এর স্পিরিটকে লালন করতে যার যার জায়গা থেকে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

বিবার্তা/আয়েশা/জেএইচ