শিরোনাম
ঢাবি’র গণরুম : স্বপ্ন মরে, মেধাবীরা পচে
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:০২
ঢাবি’র গণরুম : স্বপ্ন মরে, মেধাবীরা পচে
আশিকুর রহমান লাভলু
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এর হলগুলোতে নেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন। ফলে বহু স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়েই ঠাঁই নিতে হয় বিভিন্ন হলের গণরুমে। প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের ছত্রছায়ায় গণরুমে গাদাগাদি করেই থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। সাধারণ একটি রুমে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছে, যেখানে নেই লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা এসব গণরুমেই মরে যায় দেশসেরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, পচে যাচ্ছে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত।


বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গণরুম কমবেশি আছেই। এর মধ্যে স্যার এ এফ রহমান হলে ০৪টি, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১০টি, মাস্টার দা সূর্যসেন হলে ০৬ টি, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ০৬ টি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ০২টি, জগন্নাথ হলে ০৩ টি, কবি জসীমউদদীন হলে ০৫ টি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ০৫ টি, বিজয় একাত্তর হলে ০১টি, রোকেয়া হলে ০৩টি, শামসুন্নাহার হলে ০২টি, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ০৩টি, কুয়েত-মৈত্রি হলে ০১টি, সুফিয়া কামাল হলে ০২টি গণরুমের তথ্য পাওয়া গেছে।


ছেলেদের হলগুলোর মধ্যে গত বছর প্রথমবারের মতো গণরুম চালু করে বিজয় একাত্তর হল। এ হলের বিশাল গেমস রুমটিই গণরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিজয় একাত্তর হলের গণরুমে শতাধিক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে দিন কাটাচ্ছে। কোনো কোনো হলে শিক্ষার্থীরা রাত কাটাচ্ছে হলের বারান্দা,মসজিদ, রিডিং রুম এমনকী ছাদেও। ছারপোকা আর মশার কামড় নিত্যদিনের সঙ্গী এসব শিক্ষার্থীদের।


এসব গণরুমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. একেএম আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা এসব শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইডের মাঝে থাকে, যার ফলে মস্তিষ্কে নানাবিধ সমস্যা হয়। একজন অন্যজনের জামা-কাপড় ব্যবহার করায় রোগ-জীবাণু সহজেই অন্যের মাঝে সংক্রামিত হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে যে কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারে এসব শিক্ষার্থীরা। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, চুলকানি প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেও শিক্ষার্থীরা। গণরুমের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে বলেও মনে করেন তিনি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছরে যে বাজেট পেয়েছে তাতে আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আবাসন সমস্যা সমাধান করতে একটু সময়ের প্রয়োজন।


অন্যদিকে গণরুমে আশ্রয় নেয়া এসব শিক্ষার্থীর বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। তার ওপর বিভিন্ন আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়ার নাম করে প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনের অধীনে গেস্ট রুমে কাটাতে হয় প্রতিরাতে কয়েকঘন্টা। গেস্ট রুম বলতে সাধারণত অতিথি কক্ষ বুঝালেও ঢাবি ক্যাম্পাসে গেস্ট রুমের ভিন্ন অর্থ রয়েছে। মূলত নির্দিষ্ট একটি রুমে নির্দিষ্ট সময়ে গণরুমের সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হয়। সেখানে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে কিভাবে থাকতে হবে, ক্যাম্পাসের ও হলের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিভাবে সক্রিয় হওয়া যায় - এসব বিষয় ‘শিক্ষা’ দিয়ে থাকে।


অনেক হলেই বেশ কঠোরতার সাথে গেস্ট রুম করানো হয়। ছাত্রদের অনেকেই কেবল একটি সিট প্রাপ্তির প্রত্যাশায় দিনের পর দিন এসব 'রাজনৈতিক' কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে গেস্ট রুম নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চললেও গেস্ট রুম নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে রাজি হয়নি কোনো শিক্ষার্থী।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের একটি গণরুমে অবস্থান নেয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, কষ্ট করে পড়ালেখা করে চান্স পেয়েও মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আমাদের। একই রুমে ৪০ জনের মত থাকি আমরা। রাতে ঘুমাতে হয় অনেক কষ্ট করে। তারপরেও ভাল লাগে একসাথে অনেকগুলো বন্ধু থাকি।


এককালে 'প্রাচ্যের অক্সফোর্ড' নামে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক এমনটাই চান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


বিবার্তা/লাভলু/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com