বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকিদাতারা কার্যত একাত্তরের রাজাকারদের দোসর এবং পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসর বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) মহান বিজয়ের মাসের প্রথম দিনের সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে খেলার ধৃষ্টতা দেখায়, তাদের আর ছাড় নয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সময় ও বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়, তারা কার্যত বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যা করতে চাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান ও শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি সফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুরুন্নবী, দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মাইনুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদ নেতা কাজী সিদ্দিকুর রহমান, লেলিন আকাশ, শিরীন শিকদার, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-না) সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হক ননী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
হাসানুল হক আরো বলেন, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার কথা এবং বিজয় দিবসে বিজয় দিবসের কথা হয়। তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের যে বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা বলার জন্য বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথমদিন ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, আমরা ছুটি চাইনা, আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বানী দিবেন, মন্ত্রীরা মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে ফুল দিবেন এবং স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা হবে। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস যুগযুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখতে ২০০৪ সাল থেকে ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছি।
ইনু বলেন, ৭১ এর খুনীরাই মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। পাকিস্তানের দালাল ৭১ এর খুনী ও ৭৫ এর খুনীরা চক্রান্ত ছাড়েনি। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধুর উপর আক্রমণ করে। আজ আমরা যখন মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করছি তখন বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষও পালন হচ্ছে। আর এ শতবর্ষের ভিতরে, এ বিজয় মাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক মোল্লা হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুঙ্কার ছাড়ছে যা চক্রান্তের রাজনীতিরই অংশ।
তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে তারা ৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর খুনী, ৭১ সালের খুনী রাজাকারদের দোসর। তারা বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয় বার হত্যা করতে চাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর উপর আক্রমণ মানে বাংলাদেশ, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের উপর আক্রমন। রাজনৈতিক মোল্লারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর ছুরি চালাতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ভাস্কর্য ভাঙ্গার হুমকি দেয়ার মাধ্যমে এরা তিন ধরনের আইনী বরখেলাপ করছে-১.বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা এবং সকল ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি প্রদান, ২.ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে সমাজে অশান্তি তৈরীর চক্রান্ত ও উস্কানী দেয়া এবং ৩.ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে মিথ্যাচার করা, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মের অনুভূতির উপর আঘাত হানছে। এ আইনী বরখেলাপের দায়ে অবিলম্বের তাদের গ্রেফতার করতে হবে।
এ ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা দিবসে শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ বীরউত্তম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের আহ্বায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য শাহজাহান খান এমপি, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, জাতীয় যুব জোট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হা-ন), জাতীয় কৃষক জোট, জাতীয় নারী জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
বিবার্তা/জহির/আবদাল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]