শিরোনাম
ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভায় প্রার্থী লাঞ্ছিত!
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩২
ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভায় প্রার্থী লাঞ্ছিত!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ভাইভায় এক প্রার্থীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে মনোনয়ন বোর্ডে থাকা এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবর অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে।


সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে নিয়োগের জন্য চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ভাইভা দিয়েছেন মো. মফিজুর রহমান নামের এক প্রার্থী। আর এ ভাইভায় শিক্ষক কর্তৃক তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন অভিযোগ তার। পরে এ ঘটনায় অভিযোগ এনে তার অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ উপাচার্য (একাডেমিক) বরাবর গত ২৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।


সূত্র আরো জানায়, মনোনয়ন বোর্ডে থাকা অধ্যাপক ড.মোবাশ্বের মোনেম এবং অধ্যাপক ড. মমতাজ জাহানের বিরুদ্ধে নিজেদের গবেষণা কপিপেস্ট করার অভিযোগও করা হয়েছে। এরমধ্যে মোবাশ্বের মোনেমের আর্টিকেল The Untamed Monster: Economic Liberalisation and Corruption in Bangladesh এই শিরোনামে Society & Change জার্নালে Vol. II, No. 2, April-June 2008 এ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এ আর্টিকেলে ৮১ শতাংশ কপি করা হয়েছে, যা সফটওয়্যার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রমাণিত।


এছাড়া মমতাজ জাহানের পিএইচডি থিসিস Gender Streaming in Bangladesh Civil Service: A Critical Study of Women Quota Utilization এ শিরোনামে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। সেখানেও সফটওয়্যার রিপোর্ট অনুযায়ী ৫০ শতাংশ গ্রন্থসত্ত্ব ধরা পড়েছে।


অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, লোকপ্রশাসন বিভাগের লেকচারার ও সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ডের একটি সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড.নাসরীন আহমেদের (একাডেমিক) সভাপতিত্বে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এ ভাইভায় একজন প্রার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মফিজুর রহমান। তিনি ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের পর মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম তার সাথে বিরুপ ও কটাক্ষমূলক আচরণ করেন। এমনকি বোর্ডে তার উপস্থাপিত গবেষণা প্রবন্ধ এবং পিএইচডি সুপারভাইজারের দেয়া কাজের অগ্রগতির প্রত্যায়নসহ কাগজপত্রকে "সারপ্রাইজ প্যাকেজ" বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। শুধু তাই নয় আক্রমণাত্মক বিষয়াবলি উপস্থাপন করে প্রার্থীকে বিচলিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধান এড়িয়ে সি এণ্ড ডি নামে অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমের প্রেরিত নথি সবিস্তারে দেখলে ঘটনার প্রমাণ মিলবে বলে পত্রে বলা হয়।


অভিযোগ পত্রে লেখা হয়, একজন প্রার্থীর অভিভাবক হিসেবে এরূপ তাচ্ছিল্যের মানুষ মনোনয়ন বোর্ডে থাকায় প্রশ্ন এসেছে, এখানে যোগ্যতার বিচার হবে কিনা? একইসাথে প্রার্থীকে লাঞ্ছিত করা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ কিনা সেটাও উদঘাটিত হওয়া প্রয়োজন।


অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, মনোনয়ন বোর্ডে থাকা অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম ও অধ্যাপক মমতাজ জাহানের গবেষণা প্রবন্ধ অন্য লেখা থেকে কপি করে জালিয়াতি করা। যা সফটওয়্যার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রমাণিত। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী গবেষণা জালিয়াতিতে যুক্ত শিক্ষকদের মনোনয়ন বোর্ডে থাকা কতটা সঙ্গত বা আইনসিদ্ধ। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপও পত্রে কামনা করা হয়।


এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ উপাচার্য ( একাডেমিক) বরাবর অভিযোগপত্র দেয়া হলেও অভিযোগের বিষয় আমলে নেয়া হয়নি। এমনকি মনোনয়ন বোর্ডের আরেকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ঘটনায় ফের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ উপাচার্য (একাডেমিক) বরাবর বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) ফের অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীর অভিভাবক। এ অভিযোগপত্রে পূর্ববর্তী অভিযোগপত্রের প্রদত্ত বিষয় আমলে না নিয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভা করায় হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। একইসাথে নৈতিক মান, আইনসিদ্ধতা, যৌক্তিকতা এবং সঠিক নিয়মে মনোনয়ন বোর্ড নিয়োগ দিবে কিনা সে ব্যাপারে অনিশ্চিয়তা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সাথে বিষয়টি দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ উপাচার্য (একাডেমিক) ও সিণ্ডিকেট সদস্যদের প্রতি ফের অনুরোধ জানাতে হয়েছে।


ঘটনার বিষয়ে লাঞ্ছিত হওয়া প্রার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবার্তাকে বলেন, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি নিয়োগের ভাইভা হয়েছিল। সেখানে একজন প্রার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মফিজুর রহমান। কিন্তু এ ভাইভায় তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছিল। তার আর্টিকেলকে সারপ্রাইজ প্যাকেজ বলে তুচ্ছ করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ উপাচার্য (একাডেমিক ) বরাবর সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।


তিনি বলেন, অভিযোগপত্র দেয়ার পর বিষয়টি তদন্ত না করে উল্টো ২ দিন পরে ভাইভা নেয়া ছাড়া নিয়োগবোর্ড সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। বিষয়টিতে আমি অবাকই হয়েছি। আমার প্রশ্ন হলো, যেহেতু ১ম ভাইভা বোর্ড থেকে কাউকে চূড়ান্ত করা হয়নি সেহেতু মনোনয়ন বোর্ড ২য় ভাইভা বোর্ডে সবাইকে ডাকার কথা। অথচ না করে ভাইভা ছাড়া মনোনয়ন বোর্ড তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে।


তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস কারণে ভাইভা নেয়া সমস্যা হলে জুমসহ অনলাইন মাধ্যমে ভাইভা নেয়া যেত। কিন্তু তাও করা হলো না। এদিকে মনোনয়ন বোর্ডে থাকা সদস্য অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ও অধ্যাপক মমতাজ জাহানের পিএইডিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কপিপেস্ট ধরা পড়েছে। সেটা অভিযোগপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যাদের পিএইচডিতে সমস্যা তারা মনোনয়ন বোর্ডে থাকেন কি করে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তো তাদের এখানে থাকার কথা না।


ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী মফিজুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমি ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। তার আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। আমার পিএইচডি প্রায় শেষের দিকে ছিল। এজন্য আমি সুপারভাইজার থেকে কাজের অগ্রগতির প্রত্যয়নপত্র এনে ভাইভায় উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমার প্রত্যয়নপত্রসহ কাগজপত্রকে " সারপ্রাইজ প্যাকেজ" বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম। এখানে শুধু আমাকে ছোট করা হয়নি, আমার সুপারভাইজার বিদেশি প্রফেসরকেও ছোট করা হয়েছে।


তিনি বলেন, পিএইচডির কারেন্ট বিষয় নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করার কথা। অথচ তা না করে উল্টো আগে থেকে সব নোট করে রাখা হয়েছিল আমাকে আটকানোর জন্য। আমাকে সাইকোলজিক্যাল ভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমের এপ্রোজ ছিল অনেকটা মারমুখী। যা একজন শিক্ষকের সাথে কোনোভাবে যায় না।


অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ও অধ্যাপক ড. মমতাজ জাহান দেশের বাহিরে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


বিবার্তা/রাসেল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com