শিরোনাম
কুবির সমাবর্তন, ১৪ বছর পর শিক্ষার্থীদের আক্ষেপ ঘুচালেন উপাচার্য
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:০০
কুবির সমাবর্তন, ১৪ বছর পর শিক্ষার্থীদের আক্ষেপ ঘুচালেন উপাচার্য
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরেও কোনো সমাবর্তন না হওয়ায় আক্ষেপের শেষ ছিল না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাবর্তন ছাড়াই একে এক বিদায় নিয়েছে আটটি ব্যাচ। সবার আক্ষেপ ছিল কবে পাবে শিক্ষাজীবনের সর্বোচ্চ সম্মাননা সমাবর্তন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের এ আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। তার উদ্যোগে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে প্রথম সমাবর্তন হয়েছে।


জানা যায়, কুবির অভিষেক সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন দুই হাজার ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট। যার মধ্যে স্নাতক ডিগ্রিধারী এক হাজার ২২২ জন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এক হাজার ৬৬৫ জন। যেখানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ শিক্ষায় অসমান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন।


১৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম সমাবর্তনকে ঘিরে গ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত ছিল বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। সিনিয়রদের পেয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এদিন বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছিল।



এদিকে প্রথম সমাবর্তনকে সফল করতে কোনো কিছুতে কমতি রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যারা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সেজেছিল এক নতুন সাজে। গাউন-টুপি পরিহিত গ্রাজুয়েটদের হৈ -হুল্লোড়, বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে এদিন মুখরিত ছিল ক্যাম্পাসটি।


বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজের জীবনের প্রথম সমাবর্তন নিয়ে অনুভূতির কথা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পাস করা গ্রাজুয়েট সামসুল আলম বিবার্তাকে মুঠোফোনে বলেন, সমাবর্তন শব্দটি কি কেমন হতে পারে সেটা এতোদিন জেনেছি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখে। কিন্তু এই প্রথম আমরা সমাবর্তন পেয়েছি আর সমাবর্তন উপভোগ করেছি। শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো এই আড়াম্বর অনুষ্ঠান। শিক্ষা জীবন শেষে আবারো সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে ফিরেছি, কি যে অনুভূতি হয়েছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না।



ইসমাঈল হোসেন নামের ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, অনেক দিনের দাবি ছিল আমাদের এই সমাবর্তন। অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি আসলো। প্রথম সমাবর্তনে আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে অংশ নিয়েছি। কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি সফলভাবে শেষ হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন আয়োজনের সাহসী উদ্যোগের জন্য উপাচার্য মহোদয় ও প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই।


আলমগীর হোসেন নামের কুবির আরেক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, ১৪ বছর পর কোনো বড় অনুষ্ঠান হলে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকেন সবাই। এতোদিন ভাবতাম কবে হবে সমাবর্তন এবং কবে আসবে সিনিয়রেরা। অবশেষে সেদিনটি এসেছিল চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি। সবচেয়ে বড় কথা হলো সমাবর্তনের মাধ্যমে অনেকগুলো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা হয়েছে, যা সবচেয়ে ভালো লাগার কারণ।



শারমিন সুলতানা নামের কুবির এক ছাত্রী বিবার্তাকে বলেন, ২৭ জানুয়ারি কুবির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। অনেক দিনের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে এই দিনে। প্রথম সমাবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে সফলভাবে আয়োজনের জন্য উপাচার্য স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। তার আন্তরিকতা, উদ্যোগ আর দক্ষতার কারণেই এতো বড় একটি চ্যালেঞ্জ সফল হলো দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর।


প্রথম সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, সমাবর্তন পাবলিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাঙ্খিত বিষয়। অথচ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো সমাবর্তন হয়নি! এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আক্ষেপের শেষ ছিল না। তারা আমার কাছে বারবার সমাবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিল। এরপর আমি এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। এ কাজের জন্য ইউজিসি থেকে আমাদের মাত্র ৮ লাখ টাকা বাজেট দেয়া হয়েছে। নানা বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাকে এ কাজ করতে হয়েছে।



তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ পূরণে আমি রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সাথে কথা বললাম। তিনি সম্মনি দিলেন। এরপর আমি উদ্যোগ নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করি। ২৬টি কমিটি করেছি সমাবর্তনের শৃঙ্খলার কাজসহ সার্বিক বিষয় সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য। তারা সবাই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করায় কাজটি সফলতার সাথে শেষ করেছি।


কুবি উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সমাবর্তনে জেমসকে আনতে হবে। তাদের সে দাবিও পূরণ করলাম। এতে প্রায় ১৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘোচাতে পেরে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কুবি প্রশাসনও আনন্দিত বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/রাসেল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com