শিরোনাম
জাবি’র ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ জন শিক্ষকের বিবৃতি
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২১
জাবি’র ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ জন শিক্ষকের বিবৃতি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ এবং দুর্নীতি ও সহিংসতার মদতদাতা হিসাবে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণ ও বিচার দাবি করে ৩৬ জন শিক্ষক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।


সম্প্রতি একনেক কর্তৃক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে।আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, পরিকল্পনায় অনেক গলদ ও অস্বচ্ছতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডটি শুরু করতে যাচ্ছিল।কিন্তু প্রথম থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, এই পরিকল্পনার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন এবং পরিকল্পনায় অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবার যুক্তিসঙ্গত দাবি জানিয়ে আসছেন।কিন্তু উপাচার্য এবং তার বশংবদ প্রশাসন এই দাবিতে কর্ণপাত না করে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন, ৫০০ গাছ কাটা হয়। যেখানে এ ধরনের বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডার করার নির্দেশনা আছে, সেখানে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার করা হয়েছে এবং শিডিউল ছিনতাইয়ের ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুরু থেকে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ছিল।


এরকম একটি পরিস্থিতিতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দৈনিকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ফোনালাপ ফাঁস হলে আমরা জানতে পারি যে, ঈদের আগে কথিত ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অবৈধভাবে উপাচার্য নিজ দায়িত্বে ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন।সঙ্গতকারণেই আন্দোলনকারীরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা নিয়ে দুর্নীতির বিষয়টি খোলাসা করার দাবি তোলেন।অথচ, এই প্রকল্পের বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে এই দুর্নীতি বিষয়ে উপাচার্য অথবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার তদন্তের উদ্যোগ আজও দেখা যায়নি।


বরং ধর্মঘট চলাকালে সহকারী প্রক্টরের উপর হামলার মিথ্যা অভিযোগে প্রশাসন অজ্ঞাতনামা ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের এই পর্যায়ে গত ৫ নভেম্বর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবন অবরোধ কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের এক পর্যা‍য়ে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগের ক্যাডারবাহিনী সংঘবদ্ধভাবে সমবেত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।


গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এতে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মীর্জা তাসলিমা, অধ্যাপক রায়হান রাইন, মারিয়াম ছন্দা, খন্দকার হাসান মাহমুদসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেয়ে জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছিলাম, আহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যখন হাসপাতালে চিকিৎসারত তখন উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে এই হামলাকে ‘গণঅভ্যুথান’ হিসাবে বর্ণনা করেন, হামলা করবার জন্যে ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সশস্ত্র হামলাকে ‘গণঅভ্যুথান’ হিসাবে আখ্যা দেয়ায়, এই ঘৃণ্য হামলার মদতদানের দায়দায়িত্ব উপাচার্যের ওপরেই বর্তায়।


একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে অংশীজনেরা কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ আনয়ন করলে তা আমলে নিতে হয়, তদন্ত করে দেখতে হয়। আর সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিধি ও আইন আছে। অভিযোগ অ-প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলাও করা যায়। কিন্তু সেরকম কোনো উদ্যোগের আশ্বাস না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পাশে দাঁড়িয়ে অভিযোগকারীদের উপরেই অভিযোগ প্রমাণের দায় চাপান এবং 'কঠোর ব্যবস্থা' গ্রহণের হুমকি দেন, তা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে। দেশের মানুষের কাছে এ ধরনের বক্তব্য কোনো শুভ বার্তা বহন করে না। বরং এ রকম হুমকিমূলক বক্তব্য জাহাঙ্গীরনগর উপাচার্যকে নয়, যে কোনো ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকেই আরো নির্বিচারী হয়ে উঠতে উৎসাহিত করে, এবং অভিযোগকারী ও আন্দোলনকারীদের বিপদাপন্ন করে তোলে। তাই, জাহাঙ্গীরনগরে যে সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আন্দোলন করছেন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।


আমরা মনে করি, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও প্রতি তার বিরূপ মনোভাব এবং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার বাহিনীর উপর নির্ভরতা আমাদের লজ্জিত করে। ইতিমধ্যে সপরিবারে তার দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে এবং তিনি যেভাবে জনগণের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত করেছেন, তাতে তিনি নৈতিকভাবেও বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করবার কোনো যোগ্যতা অবশিষ্ট রাখেন নি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ এবং নিরাপত্তা দেয়ার মতো যোগ্যতাও হারিয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় আমাদের দাবি:


১। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর সহিংসতার মদতদাদা এমন একজন উপাচার্যকে পদচ্যুত করে জনগণের করের টাকার বিপুল অপচয় এবং শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ করা প্রয়োজন। অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অবিলম্বে অপসারণ পূর্বক তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি এবং সকল অনিয়মের সুষ্ঠু বিচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।


২। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হোক এবং আইনি ব্যবস্থায় আওতায় নেয়া হোক।


৩। একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক।


স্বাক্ষরপ্রদানকারী শিক্ষকবৃন্দ


১. ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


২. নাসির আহমেদ, ইংরেজী বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


৩. কামরুল হাসান, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৪. আরিফুজ্জামান রাজীব, সহকারী অধ্যাপক, ইটিই বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ।


৫. মামুন অর রশিদ, সহকারী অধ্যাপক, এমসিজে ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্বিবদ্যালয় ।


৬. সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৭. কাজী মামুন হায়দার, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


৮. কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৯. শেহরীন আতাউর খান, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


১০. কামাল চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিকাল সাইকোলজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


১১. রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


১২. সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


১৩. সৌম্য সরকার, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


১৪. অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, যবিপ্রবি।


১৫. অর্পিতা শামস মিজান, সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


১৬. সৌভিক রেজা, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


১৭. খাদিজা মিতু, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


১৮. মজিবুর রহমান , সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


১৯. কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


২০. মার্জিয়া রহমান, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


২১. সাঈদ হাসিবুল হাসান চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


২২. কাজী ফরিদ, সহযোগী অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।


২৩. সাদাফ নূর, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


২৪. মাইদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


২৫. আ-আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


২৬. মোশাহিদা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


২৭. আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


২৮. বখতিয়ার আহমেদ, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


২৯. আব্দুল্লাহ বাকী, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


৩০. সিউতি সবুর, সহযোগী অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।


৩১. কাজী অর্ক রহমান, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


৩২. তাহমিনা খানম, সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্হাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৩৩. কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৩৪. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৩৫. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


৩৬. গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com