শিরোনাম
আবাসন সংকট: ঢাবি ভিসির বাড়ির সামনে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৪৫
আবাসন সংকট: ঢাবি ভিসির বাড়ির সামনে শিক্ষার্থীরা
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন আবাসিক হলের আবাসন সংকট সমাধানে বারবার আল্টিমেটাম দিয়ে কোন সমাধান না পেয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে রাস্তার ওপর অবস্থান নিয়েছে গণরুমের শিক্ষার্থীরা।


মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকতের নেতৃত্বে ভিসির বাসভবনের সামনে তারা অবস্থান নেন।


তবে, শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে তাতে বাধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বড়ি। জানিয়ে দেয়া হয় তিনি বাসভবনে নেই। পরে গণরুমের শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। প্রক্টরের সঙ্গে দেখা করার আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন বলে জানান ডাকসু সদস্য তানবীর হাসান সৈকত।


অবস্থানকারীদের হাতে ‘প্রথম বর্ষে বৈধ সিটের অধিকার চাই’, ‘হলের সংখ্যা বৃদ্ধি কর, অতঃপর ছাত্র ভর্তি কর’, থাকার জন্য জায়গা চাই, গণরুমে ঠাঁই নাই’, ‘আমরা এখন চুপসে গেছি, জ্ঞানশূন্য কালোমাছি’ গণরুমের বঞ্চনা মানি না মানবো না’, আমার কেন সিট নাই, প্রশাসন জবাব চাই লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।


এ ব্যাপারে তানবীর হাসান সৈকত বলেন, ভিসি স্যারকে আমরা সময় বেধে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার আমাদের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখাতে পারেনি। তাই সমস্যা সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ভিসি স্যারের বাসায় থাকব।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিম বলেন, ‘এটা তো একদিনে সমাধান করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতেই পারে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। উপাচার্যের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাচ্ছে। স্যার একটি প্রোগ্রামে আছেন। আমরা স্যারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে শিক্ষার্থী আছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আবাসন সংকটের কারণে প্রতিটি হলেই সৃষ্টি হয়েছে ‘গণরুমের’, যেখানে মেঝেতে টানা বিছানা পেতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কারা এসব কক্ষে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে।


আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন হলে থেকে চাকরি খোঁজেন। ফলে কাগজে কলমে তাদের সিট না থাকলেও বাস্তবে আসন খালি হয় না।


গণরুম সংকট সমাধানের দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর কবি জসীমউদ্দীন হলের ২০৮ নম্বর কক্ষের গণরুমে গিয়ে ওঠেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।


১ অক্টোবর বিভিন্ন হলের গণরুমের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশ থেকে তিনি ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা না নিলে গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি উপাচার্যের বাসায় গিয়ে উঠবেন।


সেই সময়সীমার কথা মনে করিয়ে দিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডাকসু সদস্য সৈকত।


সেদিন তিনি বলেন, ‘এই সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেয়া ১৫ কার্যদিবসের সময়সীমা আগামী সোমবার শেষ হবে। আগামী মঙ্গলবার উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে সকালের নাস্তা করার মধ্য দিয়ে আমরা উপাচার্য ভবনে থাকার শুরু করব।”


এদিকে গণরুমের দুর্দশা লাঘবের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। এর পরে কোনোভাবেই হলে থাকা চলবে না।


পাশাপাশি আবাসন সংকট মেটাতে হলে ‘বাংক বেড’ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা হয় ওই সভায়।


ছাত্রদের দুরবস্থা নিজের চোখে দেখতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান গত রবিবার কবি জসিম উদদীন হল এবং মাস্টারদা সূর্যসেন হলের গণরুম হিসেবে পরিচিত কয়েকটি কক্ষ ঘুরে দেখেন।


সেখানে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানে পরিকল্পিত কর্মকৌশল গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া হলগুলো থেকে অছাত্রদের উৎখাতে হল প্রশাসনের পাশাপাশি হল সংসদগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।


বিবার্তা/রাসেল/এরশাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com