শিরোনাম
পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না: বুয়েট ভিসি
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫০
পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না: বুয়েট ভিসি
উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম।


এ হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগসহ সাত দফা জানিয়েছেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।


তবে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের ব্যর্থতা দেখছেন না বুয়েট উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম।


ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। ভিসি বলেন, আমার ব্যর্থতা কী করে হবে? আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। আমি তো আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি আগেই।


বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের বর্তমান উপাচার্য ও বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন এমন তথ্য জানালে তার এ দাবিকে যুক্তিযুক্ত মনে করেন না উপাচার্য সাইফুল ইসলাম।


পদত্যাগ করবেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমার এখানে কোনো অন্যায় নেই। আমি আমার ডিউটি পালন করেছি।’


উপাচার্য সাইফুল ইসলাম ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, ‘উনি আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ওখানে কাজ ফেলে এখানে এসে আমার সঙ্গে কথা না বলে আমার পদত্যাগ চাইলেন কী করে? এটা এথিক্যাল হলো না। উনি সম্মানীত ব্যক্তি, আমি সবসময় সম্মান করে কথা বলি উনাকে। উনাকে অনেক সময় টেলিফোনও করি। বুধবার আমি কুষ্টিয়া গেলাম, উনি এখানে এসে এ কথা বললেন। এটা তো যুক্তিযুক্ত কথা হলো না। একটা ঘটনা ঘটেছে, পূর্বাপর না জেনে কয়েকজনকে নিয়ে এ কথা বললেন। উনি এতবড় জ্ঞানী পণ্ডিত হয়ে এটা কীভাবে বললেন? আমি দুঃখিত ও মর্মাহত হয়েছি।’


খুনের ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, না, আমার ব্যর্থতা কী করে হবে? আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। আমি তো আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি আগেই। ডিএসডব্লিউ (ছাত্রকল্যাণ পরিচালক) চেঞ্জ করলাম।


ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য কী ধরনের ব্যবস্থার কথা ভাবছেন প্রশ্নে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে এখন কড়া ডিএসডব্লিউ নিয়োগ দিতে হবে। এ কাজটা তো কেউই করতে চায় না। তদন্ত কমিটি যেটা করলাম, করে শেষ করিনি, কিন্তু ইমেইলে বলছে এ দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কাকে দিলে চলবে; কাকে দিলে চলবে না আমাকে খুঁজতে হয়। এ করতে করতে মাথার চুল আর থাকে না।’


ছাত্ররা যে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম দাবি বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে যারা হত্যা করেছে বলে অভিযুক্ত তাদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ফৌজদারি বিচারের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, কোর্টের মাধ্যমে বিচার হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযুক্ত ছাত্র বহিষ্কার করার যে বিষয়টি সেটি তো আপনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে।


এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য হিসেবে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে ড. সাইফুল বলেন, ‘যে কোনো জিনিসের প্রসিডিওর আছে। আমাদের নিয়ম তদন্ত কমিটি। সেদিন সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত কমিটি হয়েছে এবং অবশ্যই এদের বের করে দেয়া হবে। অপরাধীকে কীভাবে রাখব? লিগ্যাল প্রসিডিওর ফলো করতে হয়। সেটি যদি আমরা না করি, এর আগেও কিন্তু কোর্টে গিয়ে আমাদের হাঁটতে হয়েছে।


এ তদন্ত কমিটি ক’দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০ দিনের মধ্যে। আমাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিওর আছে।’


র‌্যাগিংয়ের নামে বুয়েটে নির্যাতনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে আসছে। ২০১৭ সালে ৩১ মার্চ এ বিষয়ে একটি ওয়েবপেজ খোলা হয়। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে ১৬৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেখানে দেখা যায় যেভাবে আবরারকে নির্যাতন করা হয়েছে, তেমন ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটেছে।


আপনি এসব জানতেন কিনা- এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, ‘একদিন আমি শিক্ষকদের মিটিং থেকে ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে ফোন করে বললাম, ‘এ রকম নির্যাতন হচ্ছে, গার্ডিয়ানরা অভিযোগ করছেন, কী তুমি ব্যবস্থা নিচ্ছ না?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ রকম কোনো প্রমাণ নেই।’


আমি বললাম, ‘এটা কোনো প্রমাণের দরকার পড়ে না।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে যখন একজন ভিসি হয়, তখন সবসময় কাউন্টার পার্ট হয়ে যায়। ভিসি পদটা সুখকর কোনো পদ নয়। কারও না কারও স্বার্থে লাগে। আরেকটা জিনিসও থাকে, সেটা হলো একজনকে সরিয়ে আরেকজন ভিসি হওয়া যায়।


বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক রাজনীতির কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন কিনা প্রশ্নে বুয়েট ভিসি বলেন, ‘এটা তো একটা পার্ট আছেই। সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। আমাকে সব মতাবলম্বীদের নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হয়।’


ডেডবডি ক্যাম্পাসে আনার কথা তাকে কেউ জানায়নি দাবি করে সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বলেন, ‘আমি জানি ডেডবডি নিয়ে গেছে। সেদিন কেওয়াটিক পরিস্থিতিতে কোথাকার খবর কোথায় দেয়ার মতো লোকও নেই।’


বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানাজায় অংশ নিয়েছেন আপনি তা জানতেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে ডেডবডি এসেছে এই খবর আমাকে কেউ বলেনি। এর মধ্যে আমি আবার গিয়েছিলাম মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।’


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com