শিরোনাম
বঞ্চিত তারুণ্যের দীর্ঘশ্বাস ও আমাদের কর্তব্য
প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৭, ১৮:৪৬
বঞ্চিত তারুণ্যের দীর্ঘশ্বাস ও আমাদের কর্তব্য
প্রিন্ট অ-অ+

প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া যেন আমাদের বিধিলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা - সব রকম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয় ফাঁস হচ্ছে, নতুবা ফাঁসের গুজব হলেও ছড়িয়ে পড়ছে। আর উভয় অবস্থাতেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিরপরাধ সাধারণ পরীক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে এতে যে আমাদের ভবিষ্যতটিও উচ্ছন্নে যেতে বসেছে, সে খবর কি আমরা রাখি? সে কথায় পরে আসছি।


প্রশ্নপত্র ফাঁসের সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (সিনিয়র অফিসার) পদে নিয়োগের বাছাই পরীক্ষায়। ১৯ মে সকালে ও বিকেলে এই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত ছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আগেই এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। তা সত্ত্বেও সকালের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলের পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার্থীদের দাবির মুখে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক'দিন পরে হলেও সকালের নিয়োগ পরীক্ষাটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন করে পরীক্ষা নেবে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তি হবে দুই লাখের বেশি চাকরিপ্রত্যাশীর।


এর আগে গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই পরীক্ষা বাতিল না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আদালতে যান। ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ পরবর্তী কার্যক্রমে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত।


কিভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে ? শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, ''গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সকালের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আগের দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল পৌনে ১০টায় প্রথম আলোর অনলাইনে এ-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। বেলা ১১টায় পরীক্ষা শেষে জানা যায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হয়েছে। সকালের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বিকেলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিকেলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সকালের পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে পরীক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।''


কৌতুহলী পাঠক লক্ষ্য করুন, ''সকালের পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বিকেলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।'' অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে দুষ্টচক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস তো অবশ্যই করছে, তাদের সঙ্গে জুটেছে একটি ''জনদরদী'' চক্রও। এরা সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিনা টাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে।


আমাদের প্রশ্ন, এই ''মহান জনদরদী'' গোষ্ঠীকে নিয়ে। এরা কিসের আশায়, কোন স্বার্থে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিনা টাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে? আমাদের গভীর সন্দেহ, এই দুষ্টচক্র সুদূরপ্রসারী কোনো শয়তানী মতলব হাসিলের দুরাশায় এ কাজ করে যাচ্ছে।


আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি-সমাজনীতির প্রবক্তা বর্তমান সরকারকে তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করাই এদের সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যেভাবে তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরই জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক প্রজন্মেও এদের মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ হবে না। ওরা তা জানে এবং আরো জানে, এ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হলো, তরুণ প্রজন্মকে সরকারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সব রকম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস তারই অংশ।


একটা পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে তার ফল ভোগ করে অল্প ক'জন আর ভোগান্তি পোহায়, বঞ্চিত হয় সংখ্যাহীন তরুণ। যেমন, শুধু অগ্রণী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলে দুর্ভোগের শিকার হবে দুই লক্ষাধিক তরুণ। এই বঞ্চিত তরুণদলকে ''বিদ্রোহী'' করে তোলা খুব কঠিন কিছু নয়। পরাজিত শত্রু কি সেই পথ ধরেছে?


তা হোক অথবা না-ই হোক, মেধাবী তারুণ্য যে কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। একে কোনোভাবেই বঞ্চিত, হতাশ ও বেপথু হতে দেয়া যাবে না, হতে দেয়া যাবে না বিচ্ছিন্ন। বঞ্চিত তারুণ্যের দীর্ঘশ্বাস আমাদের কিছুতেই সামনে এগোতে দেবে না - আমরা যেন বিষয়টা ভুলে না যাই।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com