শিরোনাম
সিটিং সার্ভিস লাগবেই, তবে...
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪৯
সিটিং সার্ভিস লাগবেই, তবে...
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থায় সিটিং সার্ভিস নিয়ে ক'দিন আগে সৃষ্ট ধুন্ধুমারের আপাত অবসান ঘটেছে। ফিরেছে স্থিতাবস্থা। এখন মনে হয় বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসা যায়।


এই হট্টগোলের শুরু পরিবহন মালিকদের একটি সিদ্ধান্ত থেকে। তারা চলতি মাসের গোড়ার দিকে হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন, ১৫ এপ্রিলের পর রাজধানীতে আর সিটিং সার্ভিস বলে কিছু থাকবে না।


সিদ্ধান্তটি নেয়ার আগে মালিকরা নিশ্চয়ই এর ভালো-মন্দ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনার কিছুই জানার ''সৌভাগ্য'' হয়নি যাত্রীসাধারণের। তারা শুধু জানলো, রাজধানীতে আর সিটিং সার্ভিস থাকছে না।


বাসমালিকদের এ সিদ্ধান্তে প্রথম প্রথম অনেককে বেশ খুশি-খুশিই দেখা গেছে। এর কারণও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা। রাজধানীর অনেক রুটে সিটিং সার্ভিসের নামে রীতিমতো লুটপাট শুরু করে দেয় একশ্রেণীর পরিবহন মালিক। গলাকাটা ভাড়ার পাশাপাশি ''সিটিং"কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ''স্ট্যান্ডিং'' বা অতিরিক্ত যাত্রী বহন তো ছিলই। সব মিলিয়ে রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থায় যা চলছিল, তাকে এককথায় স্রেফ নৈরাজ্য ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।


মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে তাই কারো-কারো খুশি হওয়ারও যুক্তি ছিল বৈকি! কিন্তু আমাদের এই দেশে কি যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে কিছু চলে? চলে না। এবং চলে না বলেই সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়ার নির্ধারিত দিনে নগরবাসী সবিস্ময়ে দেখলো, কেবল সিটিং সার্ভিসই বন্ধ হয়নি, সঙ্গে রাস্তায় বাস চলাচলও প্রায়-বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিনের বাসযাত্রীদের দুর্দশার আর সীমা রইলো না।


এর পর কী কী ঘটলো, তা সবার জানা; উল্লেখ বাহুল্যমাত্র। তবে যে সত্যটি ওই ক'দিনের নৈরাজ্য ও দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হলো এবং যে কথাটি বলার জন্য এই দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার অবতারণা, তা হলো : রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস লাগবেই।


হ্যাঁ, লাগবেই। পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে কি নেই, তার তোয়াক্কা না করেই লাগবে। কারণ, লোকাল বাসে গাদাগাদি করে ওঠা, থাকা ও নামা অনেকের পক্ষেই রীতিমতো অসম্ভব। নারী, বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর এবং অসুস্থ ও অশক্ত মানুষদের জন্য তাই অবশ্যই সিটিং সার্ভিস লাগবে।


তবে সেই সিটিং সার্ভিসকে রাখতে হবে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে। তবেই তা সবার জন্য কল্যাণকর হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বিবেচনার জন্য আমাদের কিছু প্রস্তাব থাকলো :


কোন রুটে কোন কোন বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলবে, তা নির্দিষ্ট করা থাকবে। চাইলেই যে কেউ যেন সিটিং সার্ভিস চালু বা সিটিং সার্ভিস থেকে সরে যেতে না পারে।


সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ হলো ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়। এটা বন্ধে প্রত্যেক গাড়িতে ভাড়ার তালিকা টানানো হোক।


সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন বন্ধ করতে গাড়ির ভেতরে ওই গাড়ির নাম্বার এবং অভিযোগ জানানোর ফোন নাম্বার টানানো হোক। যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তা গণমাধ্যমে জানানো যেতে পারে।


আমরা মনে করি, এই ক'টি ব্যবস্থা নিলেও সিটিং সার্ভিস একটি গণমুখী ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত ও প্রশংসিত হতে পারে। মাথাব্যথা নিরাময়ে মাথা কেটে ফেলা যেমন কোনো সমাধান নয়, তেমনি রাজধানীর পরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়াও কারো কাম্য হতে পারে না।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com