অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় ও চিরভাস্বর দিন আজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বাররা। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা।
বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি পায়। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চিরপ্রেরণার প্রতীক।
আমরা মনে করি, একুশের চেতনা আমাদের আত্মমর্যাদাশীল করেছে। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ চিরকালের এ শ্লোগান তাই আজও সমহিমায় ভাস্বর। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের দুপ্ত অঙ্গীকার।
শোকবিহ্বলতা, বেদনা আর আত্মত্যাগের অহংকারে দেদীপ্যমান ভাষা আন্দোলনের সেই শপথ যুগে যুগে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা যোগায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। তাই আজ শুধু শোক নয়, শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিন।
কিন্তু এই বিরল গৌরবের মর্যাদা কি আমরা দিতে পারছি? নিজেদের সঁপে দিচ্ছি বিজাতীয় সংস্কৃতিতে। ভিনদেশী আকাশসংস্কৃতি গ্রাস করছে আমাদের নতুন প্রজন্মকে। কি ব্যক্তিজীবন, কি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক, সর্বক্ষেত্রেই মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবহেলা প্রকটভাবে চোখে পড়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, আমরা যেন বাংলা ভাষার প্রতি বোধ-ভালোবাসা কেবল একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য তুলে রাখি।
আমরা মনে করি, আমাদের জাতীয় শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সকল শুভধারার বিকাশে একুশের অন্তহীন প্রেরণাকে কাজে লাগাতে হবে। কাজে লাগাতে হবে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশেও। একুশের চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রেই। তবেই সম্ভব হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। যা হাজার বছর ধরে বাঙালির আরাধ্য ছিল।
আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু আবেগ ভালোবাসা নয় বরং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা আর তাকে যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব। তাহলেই আমরা জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে জাতি গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারব। দেশের স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য এখনো আমাদের অনেক কাজ করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনার প্রচার ও প্রসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও বটে।
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]